রণতোষ মুখোপাধ্যায়:-আমরা সবাই জানি, এখন থেকে ১৩৩ বছরের ও আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করার অধিকার কায়েম করতে যে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, তারই রক্তাক্ত পরিণতি ঘটে পুলিশের গুলিতে, ৪ মে ১৮৮৬সালে।
এই রক্তাক্ত আত্মত্যাগের ভেতর দিয়েই তারা অর্জন করে দৈনিক ৮ ঘণ্টা শ্রমদানের অধিকার। এই আত্মত্যাগকে চিরস্মরণীয় ও মহিমান্বিত করার লক্ষ্যে ’বিশ্ব শ্রম দিবস’ পালনের রেওয়াজ চালু হয় ১৮৯০ সাল থেকে।
তবে যে ইতিহাস অজ্ঞাত তা হল , ১৮৮৬র অনেক আগেই ১৮৫২'র ১লা মে হাওড়ায় প্রথম শ্রমিক আন্দোলন সংগঠিত হয় এবং সেই আন্দোলনে শহিদ হয়েছিলেন পাঁচজন।এই পয়লা মে-র কথা কিন্তু নেইই ইতিহাস বইয়ের পাতায়।
১৮৫৪ সালের ১৫ অগাস্ট হাওড়া ও হুগলীর মধ্যে চলেছিল প্রথম ট্রেন।সকাল সাড়ে আটটায় হাওড়া স্টেশন ছেড়ে ৯১ মিনিটে হুগলী পৌঁছেছিল ট্রেনটি। (পিছিয়ে আসি তার দুবছর আগে)
সালটা ১৮৫২ । পুরাদস্তুর কাজ চলছে সেই রেল লাইন পাতার । কোম্পানি সেই রেলপ্রকল্প রূপায়ণে শ্রমিকদের খাটিয়ে নিচ্ছিল অমানুষিক ভাবে । কোনো সময় নেই কাজ করার , বিশ্রাম নেই। খাবার ও অপর্যাপ্ত ।একের পর এক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়লেন । অবস্থা দেখে কোম্পানির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলেন এদের সুপারভাইজার গণেশ ভট্টাচার্য ।গণেশ বাবুর অনমনীয় মনোভাবে অত্যাচার কিছু টা কমায় কোম্পানি । তবু অদম্য গণেশ ভট্টাচার্য ।তার নেতৃত্বে লোকোমোটিভে শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করে।অবস্থা হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে বুঝতে পেরে চার্লস” (পুরো নাম পাওয়া যায় নি) নামের এক ইংরেজ গুলি চালিয়ে হত্যা করে ৫ জন শ্রমিককে।
এরপর শ্রমিকদের রক্তমাখা মেরজাই তুলে ধরে গণেশ ভট্টাচার্য এক দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলেন ।
তাই মে দিবস প্রথম শিকাগোর হে মার্কেটে নয় ,
শ্রমিকের অধিকার অর্জনের লড়াই প্রথম শুরু হয়েছিল এই পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া তে। ১৮৮৬র অনেক আগেই ১৮৫২য় ১লা মে হাওড়ায় শ্রমিক আন্দোলনে শহিদ হয়েছিলেন পাঁচজন।
কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে এই পয়লা মে-র কথা আমাদের ইতিহাসের পাতায় নেই। গণেশ ভট্টাচার্যের নামও নেই । ৩৬ বছর পর শিকাগোর ঘটনা ইতিহাসে আছে, কিন্তু ইতিহাস সৃষ্টিকারী এই শ্রমিকরা এখনও অজ্ঞাত এবং অবহেলিত।
তথ্য ঋন:-দুঃখহরণ ঠাকুর চক্রবর্তী।