Tuesday, April 23, 2019

মৃত মেয়ে শঙ্করী হয়ে উঠলেন শ্রী শ্রী শঙ্করী সিদ্ধেশ্বরী কালী।


         
                                                                                         ধ্রুব দত্ত চৌধুরী:-   সালটা প্রায় আনুমানিক ১৬৫০ দশকের প্রথমের দিকে গ্রাম আন্দুলে সম্ভব সাগ্নিক ব্রাহ্মণের অভাব মনে করেছিলেন জমিদার দত্তচৌধুরী পরিবার, যার ফলে হুগলি জেলা অন্তর্ভুক্ত নোয়া পাড়া থেকে দক্ষিণরাঢ়ীয় শ্রেণীর শান্ডিল্য গোত্রীয় বন্দ্যোপাধ্যায় বংশের ভট্টাচার্য পদবিধারি রঘুনাথ তর্কতীর্থ্যের নামের এক ব্রাহ্মণ সন্তানকে সপরিবারে আন্দুলে বসবাস করার জন্য বিনীত অনুরোধ জানানো হয়। দত্তচৌধুরীদের কথা রেখেছিলেন তিনি। সপরিবার নিয়ে চলে আসলে দত্তচৌধুরী পরিবার সরস্বতী নদীর তীরে এঁদের জমি দেয় থাকার জন্য। এই ভাবে গ্রাম আন্দুলে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল ভট্টাচার্যরা, এমনি শোনা যায় পরিবারের সূত্রে।

পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা রঘুনাথ তর্কবাগীশ থেকে কয়েক পুরুষ পর জন্মে ছিলেন সে পরিবারের প্রাণপুরুষ শ্রীভৈরবী চরণ ভট্টাচার্য (বিদ্যাসাগর), যিনি ছিলেন এক তন্ত্রসাধক। তাঁর বাড়ির কাছেই একটি মহাকাল শিবমন্দিরের তলায় ছিল এক গুহা সেখানে একটা পঞ্চমুণ্ডীর আসনে বসে সাধনা করতেন। সেই গুহাটি এখনো বর্তমান।

শ্রীভৈরবীর ছিল ২টি পুত্রসন্তান - জগন্নাথ বাচস্পতি এবং গোপীনাথ ভট্টাচার্য, ও একটি একটি মাত্র কন্যাসন্তান যার ডাকনাম ছিল শঙ্করী, যে মাত্র ১১ বছর বয়েসে একটা অজানা জ্বরে আক্রান্ত হয় অসময় মারা গেছিল। একবার সাধনা করা কালীন দেবী কালিকার দিব্যদর্শন পেয়েছিলেন সেই গুহাতে। সাধনায় সিদ্ধিলাভ করার সাথে-সাথে বর হিসেবে প্রার্থনা করেছিলেন যে তাঁর বংশে সবাই যেন 'না পড়ে পণ্ডিত' হতে পারে। কিছু দিন পর রোজগার মতন ভোর বেলা সরস্বতী নদীতে স্নান করতে গিয়ে দেখে যে একটা ছোট্ট মেয়ে অল্প বালি দিয়ে নদীর জল রোদ করার চেষ্টা করছে। কৌতুক স্বরূপ সাধক ভৈরবী তাকে বলেছিলেন, "ওরে বেটি, এই বালি দিয়ে কি আর জল আটকানো যায়?" তৎক্ষণাৎ সেই বালিকা উঠে তাঁকে পাল্টা বললো, "তাহলে না পড়ে কেউ কি পণ্ডিত হয় !" সাধক বুঝে ছিলেন যে সেই বালিকা ছিলেন তাঁরই ইষ্টদেবী কালী, একটা ছোট্ট মেয়ে রূপে এসে তাঁকে ব্রহ্মজ্ঞান দিয়ে গেলেন।


শোনাযায় যে একবার একটা স্বপ্নাদেশে তিনি গেছিলেন উত্তরপ্রদেশের কাশীতে। সেখানকার মণিকর্ণিকা ঘাট থেকে একটি কষ্টি পাথর উদ্ধার করেন। উনি ঠিক যেমন নির্দেশ দিয়েছিলেন ঠিক সেই ভাবেই সেই পাথর কাটা হয়েছিল। সেই বিগ্রহ একটি বামাকালী বিগ্রহের রূপ নেয়, কারণ দেবীর বাঁ পদ মহাকালের বক্ষস্থলে। সেই বিগ্রহ নিয়ে আসেন তাঁর আন্দুলের বাড়িতে। একটা মাটির মন্দিরে দক্ষিণাকালির বীজে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইংরেজির ১৭৫০ দশকের শেষের দিকে। তার সেই মৃত মেয়ের নামেই এই দেবীর নামকরণ করলেন শ্রীশ্রীশঙ্করী-সিদ্বেশ্বরী।

জমিদার দত্তচৌধুরী পরিবারের বাইশতম পুরুষ শ্রীরায়বাহাদুর মাধবচন্দ্র চৌধুরী বর্ত্তমান মন্দির এবং নাটমন্দির নির্মাণের জন্য জমি দিয়েছিল। সেখানে ইংরেজির ১৭৭১ খ্রিস্টাব্দে নাটমন্দির সহ মূল মন্দিরটি তৈরী করে পুনরায় সেই বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা হয়।

শ্রীভৈরবীচরনের  ছোটছেলে গোপীনাথ হাওড়া শহরের মল্লিক-ফটক অঞ্চলে চলে যায়, আর বড় জগন্নাথ নিলেন এই মন্দিরের দায়িত্ব। এই দেবী হলেন আন্দুলের শান্ডিল্য গোত্রীয় ভট্টাচার্য্যদের কুলদেবী, সাথে-সাথে গ্রামের অধিষ্ঠাত্রী।
ছবি:-লেখকের সৌজন্যে প্রাপ্ত।
    বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ ৮৯১০৪৬৩১১৭
     FOR ADVERTISING contact.8910463117

No comments:

Post a Comment

হাওড়া শ্যামপুরে বাছরী যুব সংঘে মা সাজবেন রেশমী সুতোর সাজে

অর্পণ দাস:  হাওড়া গ্রামীণ অঞ্চলের শ্যামপুর থানার বাছরী গ্রামের "বাছরী যুব সংঘের" সার্বজনীন দুর্গোৎসবের এবছর ৫৩ তম বর্ষ । বিগত...