Sunday, April 28, 2019

প্রয়াত ' ' এশিয়ান পেলে' পি কান্নন


‘তুমি প্লেয়ার আছো না ম্যাজিসিয়ান আছো?’

সঞ্জীব মুখার্জি:- ১৯৬৬ সালে তিনি এসেছিলেন মোহনবাগানে। ষাটের দশকের প্রথমার্ধে যে দুর্দান্ত প্রতাপ মোহনবাগান দেখিয়েছিল তা তখন কিছুটা স্থিমিত হয়ে গেছে। এই দশকে লিগ, ডুরান্ড, শিল্ড একাধিকবার জিতলেও জেতা হয়নি রোভার্স কাপ। সেই ১৯৫৫ সালের পর আর মোহনবাগান তাঁবুতে ঢোকেনি এই ট্রফি।১৯৬৪ আর ১৯৬৫ তে ফাইনালে উঠেও মোহনবাগান হেরে গিয়েছিল যথাক্রমে বি এন আর এবং মফতলালের কাছে।   মোহনবাগানে রোভার্স কাপ আবার এল ১৯৬৬-১৯৬৭ মরশুমে। সেবার ফাইনালে মোহনবাগান মুখোমুখি হয়েছিল ভাস্কো ক্লাবের। ফাইনালে মোহনবাগানের প্রাধান্য ছিল একতরফা। খেলার সতেরো মিনিটে সুকুমার সমাজপতি এবং পুঙ্গম কান্নন নিজেদের মধ্যে বল দেওয়া নেওয়া করে ভাস্কোর সীমানায় ঢুকে পড়েন। প্রায় ত্রিশ গজ দূর থেকে কান্নন তীব্র শট নিলেন। বল ক্রসপিসে লেগে ভাস্কোর গোলকিপার এঞ্জেলোকে পরাস্ত করে ঢুকে যায় গোলে। ঐ গোলেই খেলার মীমাংসা। দীর্ঘ ১২ বছর পরে আবার রোভার্স কাপ এল মোহনবাগানে।
শুধু এই একবারই নয়। তাঁর গোলে মোহনবাগান রোভার্স জিতেছে ১৯৭১-৭২ মরশুমেও। সেই ভাস্কো ক্লাবকেই হারিয়েই। খেলার বিরতির আগে শ্যামসুন্দর মান্নার থ্রু বল সুকল্যাণ ঘোষদস্তিদারের পা ঘুরে কান্ননের কাছে আসতেই তিনি বল জালে জড়িয়ে দেন।
১৯৬৬-৬৮, ১৯৭১, ১৯৭৩-৭৫ মোহনবাগানে খেলেছেন কান্নন। তাঁর পরিচিত হয়ে গিয়েছিল ‘এশিয়ান পেলে’ বলে। তাঁর ড্রিবলিং দেখে মুগ্ধ হয়ে একবার অমিতাভ বচ্চন বলেছিলেন, ‘তুমি ফুটবলার আছো না ম্যাজিসিয়ান আছো?’
কলকাতার ফুটবলপ্রেমীরা যারা ষাটের দশকের শেষভাগে খেলা দেখেছেন তাঁরা ভুলতে পারবেন কান্ননকে? মনে আছে সেই শ্লোগান, ‘সব ট্রফি বারবার, অমৃতবাজার একবার’। হ্যাঁ একবারই হয়েছিল। অমৃতবাজার সেন্টিনারি ট্রফি। অমৃতবাজার পত্রিকার শতবর্ষ উপলক্ষে ১৯৬৮ সালে।মোহনবাগান, মহামেডান আর ইস্টবেঙ্গলকে নিয়ে। প্রথম খেলায় পরিমল দে-র গোলে মহামেডান স্পোর্টিংকে হারাল ইস্টবেঙ্গল। একদিন পরেই মোহনবাগানের সাথে মহামেডানের খেলা। মোহনবাগান পিছিয়ে পড়ল দু’গোলে। মহামেডানের সাদাতুল্লা ভয়ংকর হয়ে উঠেছিলেন সেদিন। একাই দুটি গোল করলেন। মোহনবাগানকে খেলায় ফেরালেন কান্নন। সীতেশ দাসের তোলা উঁচু বল মহামেডান গোলকিপার মুস্তাফা ঠিকমতো ফিস্ট করতে পারেননি। সুযোগ কাজে লাগাতে ভুলচুক করেননি কান্নন। মোহনবাগানের হয়ে দ্বিতীয় গোলটি শোধ করলেন নঈমুদ্দিন। ২-২ ড্র।
শেষদিন মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল মুখোমুখি। ড্র করলেই চ্যাম্পিয়ন ইস্টবেঙ্গল। মোহনবাগানকে জিততেই হবে। প্রথমার্ধ গোলশূন্য। দ্বিতীয়ার্ধে জটলার মধ্যে থেকে গোল করে মোহনবাগানকে এগিয়ে দিলেন অরুময়নৈগম। ইস্টবেঙ্গলের কফিনে শেষ পেরেকটি পুঁতলেন কান্নন। খেলা শেষ হওয়ার সামান্য সময় আগে বল ধরে এগিয়ে চললেন তীব্র গতিতে। থঙ্গরাজ বাঁধা দিতে এগিয়ে এলে বল ঠেললেন গোলে। পোস্টে লেগে বল আশ্রয় নিল জালে।মোহনবাগানও অমৃতবাজার শতবর্ষ কাপ জয় নিশ্চিত করল।
ভারতীয় দলেরও প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৬৬ সালে ব্যাংকক এশিয়ান গেমসে। ১৯৬৮তে মারডেকাতে। ভারতীয় দলের জার্সি গায়ে তাঁর কিছু গোলও আছে। 
বেশ কিছুদিন অসুস্থ ছিলেন কান্নন। আজ সন্ধ্যায় চলে গেলেন।

No comments:

Post a Comment

হাওড়া শ্যামপুরে বাছরী যুব সংঘে মা সাজবেন রেশমী সুতোর সাজে

অর্পণ দাস:  হাওড়া গ্রামীণ অঞ্চলের শ্যামপুর থানার বাছরী গ্রামের "বাছরী যুব সংঘের" সার্বজনীন দুর্গোৎসবের এবছর ৫৩ তম বর্ষ । বিগত...