Wednesday, July 17, 2019

হাওড়া জেলার একমাত্র হকি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আজ অস্তিত্বের সংকটে


রাজীব মন্ডল:-  নির্মীয়মান  হাওড়া ইন্ডোর স্টেডিয়াম পেরিয়েই ডুমুরজলার বাঁ দিকের মাঠটিতে রোজ দেখা যায় মহিলারা সহ একঝাঁক কচিকাঁচারা হকি অনুশীলন করছে। এমনকি তিন-চার বছরের বাচ্চারাও তাদের মা ---বাবার হাত ধরে হকিতে হাতে খড়ি নিতে আসছে‌ এখানে।

'ধ্যানচাঁদ হকি ট্রেনিং সেন্টার' আর তাঁর নামেই এই মাঠটির নাম ধ্যানচাঁদ হকি গ্ৰাউন্ড। আজ এই মাঠ বাংলা তথা দেশের অন্যতম সাপ্লাই লাইন। ঝাঁকে ঝাঁকে প্রতিভাবান খেলোয়াড় উঠে এসেছেন এই মাঠ থেকেই।

সালটা ছিল ১৯৭১। ছোটনাগপুর, রাঁচি ইত্যাদি অঞ্চল থেকে একদল আদিবাসি ঝুপড়ি বানিয়ে থাকতে শুরু করে নতুন রাস্তার ধারে একটি জায়গায়, আজ যেটির নাম প্রেমনগর।  সেখানকার ছেলেমেয়েরাই   চার দশক আগে এই মাঠে হকি খেলা শুরু করেছিল৷ সেখানেই একদা থাকতেন 'শিলভানুজ মিনজ্'  । তাঁর হাত ধরেই হকি খেলার সূত্রপাত এখানে।  তারপর ধীরে ধীরে তা এলাকার সব মানুষের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে৷ আদিবাসী ছেলে জয়মাসি এক্কা এখানে খেলেই পুলিশে চাকরি পান৷ এখন তিনিই এখানকার কোচ কাম কর্তা৷


শিলভানুজ বাবুর অনুপ্রেরনায় একসময় এগিয়ে‌ আসেন ভোলানাথ মন্ডল, কলকাতা হকি মাঠে যিনি 'ভোম্বলদা ' নামে জনপ্রিয়।এলেন উত্তম মন্ডল সহ আরো‌ অনেক হকি প্রেমী।

কুলদীপ মিনজ, জেমস কুজুর,রাজেশ নাগরা, হেনরি এক্কার মতো নামীদামী তারকা প্লেয়ার উঠে এসেছেন এই মাঠ থেকেই।

এত প্রতিভা এত লড়াই এত সাফল্য এত অনুশীলনের পরেও সরকারের তরফে আজ পর্যন্ত মেলেনি এক কানাকড়িও। জানালেন ক্যাম্পের কার্যকরী সম্পাদক সন্দীপ সাহা। মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরনায় ক্রীড়াসাথি প্রকল্পে‌ হাওড়ার অলি গলির ক্লাবও ২ লক্ষ টাকা পেয়ে যায়(একই ক্লাব দুবার করেও পেয়েছে) তখন হাজার আবেদন‌ নিবেদনে ও এই প্রতিষ্ঠানের কপালে শিকে ছেঁড়েনি। জোটেনি সরকারি এক কানাকড়িও। মুখ ফিরিয়ে নেন ফুটবলার সাংসদ প্রসূন বন্দোপাধ্যায় ও।উল্টে রাজ্য সরকার এই ডুমুরজলার মাঠ অধিগ্ৰহন করায় এই ট্রেনিং সেন্টারের ভবিষ্যৎ কি তা জানেন না কেউই। এই মাঠের পাশেই মুখ্যমন্ত্রীর হেলিপ্যাড। সময়ে‌সময়ে নিরাপত্তা র কারনে‌ যেমন বন্ধ রাখতে‌ হয়‌ খেলা তেমনই বাজি মেলা ,ডগ শো' ও হয়‌ এই খেলার মাঠে!



যে রাজ্যে হকির অস্তিত্ব প্রায় মুছেই যেতে‌ বসেছে, 'সাই' বাদে আর কোথাও খেলার জন্য অ্যাস্ট্রো টার্ফ নেই৷ যেখানকার ঐতিহ্যবাহী বেটন কাপ প্রায় বন্ধের পথে৷ লিগ কবে শুরু হয় , কবে শেষ হয় কেউ জানতেও পারে না , সেই বাংলার একটা মাঠে এখনও প্রবীণ -নবীন প্রজন্ম হাতে হাত মিলিয়ে হকি প্র্যাক্টিস করছে৷ হকিকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছে । ছোট ভাঙা ক্লাব  তাবুতে‌ নেই বিদ্যুৎ, নেই আলো। সেই অন্ধকার ই যেন ঘিরে‌ ধরেছে  হাওড়া জেলার হকিতে। বাংলা হকির অন্যতম এই  সাপ্লাই লাইন আজ অস্তিত্বের সংকটে। এই সাপ্লাই লাইনের একটি লাইফ লাইনের আশু প্রয়োজন, কিন্তু কে দেবে সেই আশ্বাস?

No comments:

Post a Comment

হাওড়া শ্যামপুরে বাছরী যুব সংঘে মা সাজবেন রেশমী সুতোর সাজে

অর্পণ দাস:  হাওড়া গ্রামীণ অঞ্চলের শ্যামপুর থানার বাছরী গ্রামের "বাছরী যুব সংঘের" সার্বজনীন দুর্গোৎসবের এবছর ৫৩ তম বর্ষ । বিগত...