Thursday, June 6, 2019

মর্গ থেকে শরবতে ! বিষ বরফে নীলকন্ঠ ‌‌‌‌ শহর


রণতোষ মুখোপাধ্যায়:- চাঁদিফাটা রোদ্দুর , গলছে পিচ, পুড়ছে চামড়া।   রাস্তায় বেরিয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ। আর এই মুশকিল আসানে লস্যি থেকে আখের রস ,আমের শরবত থেকে লেবুর জল- তৃষ্ণার্ত খরিদ্দার কে প্রাণের আরাম দিতে  সবেতেই শীতল বরফকুচির ছোঁয়া। অথচ পয়সা খরচ করে আপনি যে শরবতের গ্লাসে গলা ভেজাচ্ছেন তাতে মিশে থাকা বরফের টুকরো মর্গ থেকে আনা নয়তো!



আপনার লেবু জলের গেলাসে টুকরো বরফখানা মর্গ থেকে আনা নয়তো!

আজ্ঞে হ্যাঁ। মৃতদেহ সংরক্ষণ, মাছ-সবজির সংরক্ষণে ব্যবহৃত এই ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল আইস’-ই নিরানব্বই শতাংশ দোকান বা রাস্তার ধারে বিক্রি হওয়া  ফ্রুট জুস ,লস্যি বা  লেবু জল হয়ে  প্রতিদিন ঢুকছে শহরবাসীর শরীরে!
যেহেতু এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল বরফ তৈরিই হয় অপরিশোধিত জল দিয়ে৷ ফলে এই বরফের জল থেকে টাইফয়েড, জন্ডিস, পাচনক্রিয়ায় ব্যঘাত ঘটানোর মতো অসুখ ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ হতে পারে ক্যান্সারের মতো মারণ রোগও।



কলকাতায়  নিউমার্কেট চত্বরে এবং হাওড়ায় জিটি রোড ও ময়দান সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে একাধিক ফলের রস, আখের রস, লস্যির দোকান।কিন্তু কি হাওড়া কি কলকাতা-সমস্ত দোকানগলিই নজরদারির অভাবে নোংরা জল দিয়ে তৈরি  সস্তার ইন্ডাস্ট্রিয়াল বরফ ব্যবহার করে পথ চলতি মানুষকে সাময়িক স্বস্তি দেওয়ার নামে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। হাওড়া পুরএলাকায় পুরসভার সক্রিয়তা বা কলকাতা পুরসভার এর বিরুদ্ধে অভিযান সবটাই প্রশ্নের মুখে। বছরে এক আধবার অভিযান চালালেও তা অনেকটা পানাপুকুরে ঢিল মারার সমার্থক । উপযুক্ত পরিকাঠামো ও অর্থের অভাবে পুর অভিযান ও এখন ধুঁকছে।
অথচ মুম্বই শহর ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল আইস বা বাণিজ্যিক বরফ কে নির্দিষ্ট একটি রঙে পৃথক করেছে।ফলে আপনি বাইরে থেকেই বুঝে যাবেন কোনটা খাবার যোগ্য আর কোনটা নয়। আর আমাদের শহর! এখনও সেই নজরদারিই ভরসা। আর ঐ এক আধবার নজরদারিতে যে ফল কিছুই হয়না তার প্রমাণ মিলবে কলকাতা বা হাওড়ার যে কোনও একটি শরবতের দোকানে উঁকি দিলেই, -রাস্তার ধারে নোংরাতেই ডাঁই করে‌ রাখা বরফের চাঁই, প্রয়োজন মতো একটি নোংরা বস্তায় ভরে‌ ভারী কিছু দিয়ে গুঁড়িয়ে তারপর মিশিয়ে দেওয়া হয় শরবতে-চিত্রটা সর্বত্রই এক।




কম খরচা করে যদি পকেট ভরা যায় তার উপর যদি নজরদারির অভাব থাকে কে আর অন্য পথে হাঁটতে চায়!তাই ফি বছর গরমে মানুষকে ঠান্ডা শরবতে তৃপ্তি দেওয়ার নামে   মৃতদেহ তাজা রাখার বরফ শরবতে মিশিয়ে নির্বিকার চিত্তে পয়সা রোজগার করে নিচ্ছেন।


আমাদের অন্তর্তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।   র শহর বা শহরতলির মর্গের সামনে থেকে অত্যন্ত কম দামে এই বরফ কেনেন বরফ বিক্রেতারা৷সেই বরফ জড়ো হয় হগ মার্কেটের আশেপাশে। তার পরে সেই বরফ শহরের বিভিন্ন প্রান্তের শরবতের দোকানদারা কিনে নিয়ে যান তাঁদের থেকে। এরপর সেই বরফ শরবতে মিশে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। চিকিৎসকদের মতে, এই বরফ দীর্ঘ সময়ের জন্য শরীরে গেলে পেটের সমস্যা ছাড়াও কিডনির সমস্যা,অন্ধ্যত্ব এমনকি ক্যান্সার পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে।

আর কি,ভাগাড়ে   মাংস তো‌ বঙ্গবাসী আগেই উদরে নিয়েছে আর এবার সেই বরফ উদরস্থের পালা যার উপরে কিছুক্ষণ আগেই হয়তো কোনও মৃতদেহ শায়িত ছিল। 
এ বঙ্গে ভাই সবই হয়,সব সত্যি।সব সত্যি।


No comments:

Post a Comment

হাওড়া শ্যামপুরে বাছরী যুব সংঘে মা সাজবেন রেশমী সুতোর সাজে

অর্পণ দাস:  হাওড়া গ্রামীণ অঞ্চলের শ্যামপুর থানার বাছরী গ্রামের "বাছরী যুব সংঘের" সার্বজনীন দুর্গোৎসবের এবছর ৫৩ তম বর্ষ । বিগত...