Monday, May 27, 2019

উচ্ছে, বেগুন,পটল,মুলোর রোজনামচা থেকে বিরিয়ে উচ্চমাধ্যমিকে সাফল্য


পৃথ্বীশরাজ কুন্তী: আঠারো বছর উচ্ছ্বল-আনন্দের। এ বয়স খেলাধূলা করার,এ বয়স বই-খাতা-কলম নিয়ে স্কুলে যাওয়ার এবং লেখা পড়া শিখে অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখার । কিন্তু চরম আর্থিক অনটনের কারণে উচ্ছ্বল-আনন্দ আর খেলাধূলায় ছেদ পরলেও লেখাপড়া করে বড় হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে যায়নি আমতার উদং উচ্চ বিদ্যালয়ের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী শিমুল চক্রবর্তীর। অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে পাথেয় করেই অভাব-অনটন-আর্থিক প্রতিকূলতার সাথে প্রতিনিয়ত লড়াই করে বাজারে আনাজ বিক্রির কাজে সহায়তা করে পরিবারের অন্ন সংস্থানের পাশাপাশি লেখা পড়া চালিয়ে যাওয়া এই মেধাবী এবছর উচ্চমাধ্যমিকে ৪২৯ নাম্বার পেয়েছে।


শিমুলের বাড়ি আমতা-১ নং ব্লকের উদং গ্রামে। বাবা অশোক চক্রবর্তী দিন মজুর খেটে স্ত্রী,পুত্র-কন্যাসহ কোন মতে চার জনের সংসার চালাতেন। কিন্তু হঠাৎই দু'বছর আগে বাবাকে হারিয়ে অদ্ভুত এক আঁধারের সম্মুখীন হতে হল এই কৃতি ছাত্রের পরিবারকে।প্রবল অন্ধকারের মধ্যেও আঁধারের ভ্রুকুটিতে ভয়না রেখে আলোক উৎসের সন্ধানে ছুটে চলার নামই জীবনসংগ্রাম।একদিকে অসম্ভব দারিদ্র্য ও অন্যদিকে সংসারের হাল নিজের কাঁধে নিয়েই জীবন সংগ্রামের কঠিন সোপানগুলি অতিক্রম করার কাজে নামতে হল বছর আঠারোর এই ছাত্রকে।পড়াশোনার পাশাপাশি শুরু হল অন্ধকার থেকে আলোয় উত্তরণের এক অদম্য লড়াই।

সেই কৃতিই উচ্চমাধ্যমিকে বাংলায় ৯২,ইতিহাসে ৮১,ভূগোলে ৮৭,রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ৮৫ ও সংস্কৃতে ৮৪ ও ইংরাজিতে ৫৭ পেয়েছে।
যে লড়াইয়ের সূচনা হয় ভোর চারটেয় ঘুমহীন ক্লান্ত চোখ মুছতে মুছতে স্থানীয় বাজারে ছোটার মধ্যে দিয়ে।সেখানে দশটা পর্যন্ত সব্জিবিক্রেতার কাজে সহায়তা করা,তারপর কোনোরকমে দু'এক মুঠো ভাত খেয়ে বিদ্যালয়ের পানে ছুটে চলা।কোনো কোনোদিন বা ভাতও জোটেনা ঠিকমতো।স্কুল থেকে ফিরেই সামান্য কিছু আয়ের আশায় আবারও তাকে ছুটতে হয় বাজারে সব্জি গোছানোর কাজে।সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে শুরু হয় নতুন স্বপ্ন দেখার এক অদম্য লড়াই।সেই লড়াই চলে মধ্যরাত অব্ধি বা কখনো তার অজান্তেই তা পৌঁছে যায় ভোর পর্যন্ত।তারপর আবার কাকভোরে ছুটে চলা বাজারের পানে।এটাই তো অস্ত্বিত্বের জন্য সংগ্রাম(Decent with modification),এটাই তো অন্ধকারের উৎস হতে আলোর পানে ছুটে চলার কঠোর সংগ্রাম!

শিমুলের মা কল্পনা চক্রবর্তী জানান,কোনরকমে অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে তাঁর মাসিক আয় ৬০০ টাকা।অন্যদিকে বাজারে কাজ করে ছেলের দৈনিক আয় ৫০ টাকা। ২১০০ টাকাতেই কোনোভাবে তিনজনের সংসার চলে।হ্যাঁ, শুনতে অনেকটা গল্পকথা মনে হলেও এটাই কঠিন বাস্তব।

এই চরম আর্থিক অনটনের মাঝেও পরিবারের সকল দায়িত্বভার গ্রহণ করার পাশাপাশি শুরু হল নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছানোর লড়াই।যে ছেলেটি মাধ্যমিকে ৫৮ শতাংশ নাম্বার পেয়েছিল সে'ই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে লড়াই চালিয়ে একাদশ শ্রেণীর পরীক্ষায় কলা বিভাগে ৮০ শতাংশ নাম্বার পেয়ে তাক লাগিয়ে দিল।অন্যদিকে শিমুলের পাশাপাশি তার বোন শিউলিও শুরু করল তার অদম্য লড়াই।কিন্তু,নুন আনতে পান্তাফুরানোর সংসারে উচ্চশিক্ষা চালিয়ে যাওয়া কার্যত যখন প্রশ্নচিহ্নের সম্মুখীন সেই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তার পাশে দাঁড়ায়   স্থানীয় এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।







No comments:

Post a Comment

হাওড়া শ্যামপুরে বাছরী যুব সংঘে মা সাজবেন রেশমী সুতোর সাজে

অর্পণ দাস:  হাওড়া গ্রামীণ অঞ্চলের শ্যামপুর থানার বাছরী গ্রামের "বাছরী যুব সংঘের" সার্বজনীন দুর্গোৎসবের এবছর ৫৩ তম বর্ষ । বিগত...