Friday, May 31, 2019

জনশ্রুতি, এই মন্দির নির্মাণ করেছিলেন স্বয়ং বিশ্বকর্মা


News H Timesওয়েব ডেস্ক :- প্রাচীনযুগের একটি কিংবদন্তী অনুযায়ী দক্ষযজ্ঞের সময় সতীর বাম গুল্ফ(গোড়ালি) তমলুকের এই অংশে পতিত হয়েছিল তাই এটি ৫১ সতীপীঠের অন্যতম । দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা দেবী বর্গভীমার মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন । ভরতচন্দ্রের 'অন্নদামঙ্গল' হতে জানা যায় এই তীর্থ দেবী শিবানীর "বাম গুলফ" অর্থাৎ বাঁ চরণের গোড়ালির স্পর্শে ধন্য। দেবীর নাম বর্গভীমা, মতান্তরে দেবী ভীমরূপা এবং ভৈরব কপালী। যথা-

"বিভাসে বাম গুলফ ফেলিল কেশব-
ভীমরূপা দেবী তাহে কপালী ভৈরব।।"

কিন্তু তন্ত্রমতে দেবীর নাম কৃপালিনী ও ভৈরব সর্বানন্দ। কিন্তু বর্তমানে মন্দিরে ওঠার সোপান শ্রেণীর বাম পার্শ্বে প্রতিষ্ঠিত ভৈরব ভূতনাথ।

এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা ও প্রতিষ্ঠাতা নিয়ে অনেকগুলি মতবাদ প্রচলিত।

প্রথম প্রবাদ বলে, চণ্ডীমঙ্গল গ্রন্থের নায়ক ধনপতি সওদাগর সিংহল যাত্রার সময়ে প্রতিষ্ঠা করেন এই মন্দির। তাঁর এক ভৃত্য এক কুন্ডের সন্ধান পায়, যার জলে ডোবালে যে কোনও কিছুই সোনা হয়ে যায়। ধনপতি সেই মতো সব সম্পদ সোনায় রূপান্তরিত করে বিপুল সম্পদ লাভ করেন। কৃতজ্ঞতাস্বরূপ, তিনি নির্মাণ করেন বর্গভীমার মন্দির।


 দ্বিতীয় প্রবাদ বলে, তাম্রলিপ্তের রাজা তাম্রধ্বজ এবং এক ধীবর রমণীর কথা। সেই ধীবর রমণী জানতে পারে, এই কুন্ডের জল ছিটিয়ে দিলে মৃত প্রাণ পায়। তাম্রধ্বজের প্রাসাদে মাছ জোগান দেওয়ার সময়ে সে একদিন তাজা রাখার জন্য এই কুন্ড থেকে জল নিয়ে ছিটিয়েছিল মাছের গায়ে। মাছগুলো বেঁচে ওঠে এবং ধীবর রমণী সেই অবিশ্বাস্য সংবাদ দেয় রাজাকে। রাজা ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে এসে কুন্ডের জায়গায় দেখতে পান এক বেদী আর তার উপরে অধিষ্ঠিত প্রস্তরময়ী দেবীকে। তারপর তিনি প্রতিষ্ঠা করেন এই মন্দির।

তৃতীয় প্রবাদ মতে, কৈবর্ত রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা কালু ভুঁইয়া বর্গভীমার মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা।
বর্গভীমার মন্দিরের খ্যাতি আছে পুরাণেও। পুরাণ বলে, দক্ষ হত্যার পর তার কপালটি শিবের হাতে আটকে ছিল ব্রহ্মহত্যার অপরাধে। এই তাম্রলিপ্তে বর্গভীমার কুন্ডে এসে সেই কপাল খসে পড়ে। তাই পুরাণ এই পীঠকে কপালমোচন নাম দিয়েছে। তাছাড়া, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এমন বার্তা  বঙ্গের  বর্গভীমার মতো আর কোনও কালী-মন্দির  বহন করে না।


চতুর্থ প্রবাদ মতে, এই মন্দির হাজার হাজার বছরের পুরনো নয়, সপ্তদশ-অষ্টাদশ শতকে   মারাঠা আক্রমনের সময় মারাঠা সর্দার এই দেবীর পুজো করেছিলেন। আর তাই বর্গীদের দ্বারা পুজিতা এই ভীমারূপী মা "বর্গভীমা" নামে পরিচিত।

বর্গভীমার মন্দিরটি আদতে ছিল এক বৌদ্ধ স্থাপত্য। রাজা অশোকের তৈরি তাম্রলিপ্তের স্তূপের উপরে এই মন্দির নির্মিত হয়। মন্দিরের বাইরের স্থাপত্য ও গঠনপ্রণালীও বাংলার মন্দিরশিল্প থেকে আলাদা। ভিতরের গঠনপ্রণালী একান্তভাবেই বৌদ্ধ বিহারের মতো; বুদ্ধগয়ার মন্দিরের সঙ্গে যথেষ্ট সাদৃশ্য রয়েছে। ৩০ ফুট উঁচু বুনিয়াদের উপরে মূল মন্দিরটি প্রায় ৬০ ফুট উঁচু। ভেতরে ঢুকলে মনে হবে, ছাদটি তৈরি হয়েছে বড় একটি শ্বেতপাথর কুঁদে। মূল মন্দিরের সামনে রয়েছে যজ্ঞ মন্দির। এই দুই মন্দির জগমোহন নামের খিলান দিয়ে যুক্ত। যজ্ঞ মন্দিরের সামনে বলিদান ও দেবীবন্দনার জন্য রয়েছে নাটমন্দির। তার সামনে তোরণ ও নহবতখানা। একখণ্ড পাথরের সামনের দিক কুঁদে তৈরি হয়েছএ এই অনুপম দেবী মূর্তি। দেবী মূর্তির বেদীর নিচে সোপাণশ্রেণির মধ্যে ভূতিনাথ ভৈরবের অবস্থান। শোনা যায়, কালাপাহাড়ের মতো হিন্দুত্রাসও ওড়িশা বিজয় অভিযানকালে এই দেবীদর্শনে মুগ্ধ হয়ে মন্দির রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফারসিতে দলিল লিখে যান। সেই বাদশাহি পাঞ্জা আজও আছে বর্গভীমার পূজকদের কাছে। 

দেবী বর্গভীমাকে অনেকে চণ্ডীতন্ত্রে কথিত ভীমা দেবী বলে মনে করেন। এই দেবীর মূর্তি একটি কৃষ্ণপ্রস্তর খণ্ডের সম্মুখভাগে খোদাই করে নির্মাণ করা হয়েছে। এই মূর্তির গঠন উগ্রতারা মূর্তির মতই। দেবীর ধ্যান ও পূজাদি যোগিনী মন্ত্র ও নীল তন্ত্রানুসারে সম্পাদিত হয়।

পথ নির্দেশঃ
হাওড়া নিউ কমপ্লেক্স থেকে মেচেদা, খড়গপুর ইত্যাদি মেদিনীপুরগামী লোকাল ট্রেনে মেচেদা ষ্টেশনে নেমে বাইরে বেরতেই চোখে পড়বে বাস স্ট্যান্ড। সেখানে গিয়ে মানিকতলা গামী বাসের খোঁজ নিয়ে তাতে আধ ঘণ্টার পথ পেরিয়ে মানিকতলা মোড়ে বা হসপিটাল মোড়ে নেমে রিকশায় বা টোটোতে মিনিট ১০শেক পথ এক্কেবারে মন্দিরের সামনে আপনাকে পৌঁছে দেবে। 

(মন্দিরে দুপুরে অন্ন ভোগ পেতে হলে সকাল ১০টার মধ্যে মন্দির কমিটির অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন। টিকিত ৯০ টাকা।)





ছবি ও তথ্য:-টিম হাওড়া টাইমস এবং অরিজিৎ চন্দ।

No comments:

Post a Comment

হাওড়া শ্যামপুরে বাছরী যুব সংঘে মা সাজবেন রেশমী সুতোর সাজে

অর্পণ দাস:  হাওড়া গ্রামীণ অঞ্চলের শ্যামপুর থানার বাছরী গ্রামের "বাছরী যুব সংঘের" সার্বজনীন দুর্গোৎসবের এবছর ৫৩ তম বর্ষ । বিগত...