Saturday, May 4, 2019

কার দখলে হাওড়া,জনমত সমীক্ষার রায়

-News H Times Team:- নারদা  স্টিং অপারেশনের পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন,' আগে জানলে টিকিট দিতাম না।'কিন্তু জানার পর আবার ও টিকিট দিলেন এবং দিলেন এক ই কেন্দ্র হাওড়া সদরের। মাঝখানে কানাঘুষো চলছিল,হাওড়া কেন্দ্রে প্রসূন বন্দোপাধ্যায় কে এবার আর টিকিট দেবেননা মুখ্যমন্ত্রী। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে উঠে আসছিল মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারের একজনের নাম।কিন্তু সব জল্পনা উড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী আবারও ভরসা রাখলেন সেই প্রসুনেই।

 প্রসূনের সমর্থনে জনসভা থেকে শুরু করে পদযাত্রা ,কোনও কিছুর ই ত্রুটি রাখছেন না দলনেত্রী। যদিও এর আগে     পর পর দুবার এই কেন্দ্র থেকেই জয় লাভ করেছেন প্রসূন তবু এবারের লড়াই টা যে খুব একটা সহজ হবেনা তা  যেমন বুঝতে পারছেন প্রার্থী নিজে তেমনই  বিলক্ষণ বুঝেছেন খোদ মমতাও।  প্রসূনের  স্বচ্ছ  ভাব মূর্তিতে সবথেকে  বড়  গলার কাঁটা  নারদা'।  ভিডিওটি  ভুয়ো বলে শাসকদল প্রথম দিকে যে প্রচার চালিয়ে ছিল এতদিনে প্রমাণ হয়েছে - সেটি আসল।

বিদায়ী সাংসদ তার সাংসদ তহবিলের সমস্ত টাকাই খরচ করে ফেলেছেন, অন্ততঃ  সাংসদের দাখিল করা তথ্য তাই বলছে। হাওড়া শহরের  রাস্তা,আলো,শিক্ষা, খেলাধুলো সবক্ষেত্রেই তিনি দরাজ হাতে অর্থ মঞ্জুর করেছেন বলে দাবি সাংসদের। তবু  ভোটের  প্রচারে  বেরিয়ে                    দু এক জায়গায়  জনতার বিক্ষোভের মুখে  পড়তে  হয়েছে সংসদ কে। অভিযোগ, তিনি  নাকি  বিগত  পাঁচ  বছরে দেখাই করতে আসেননি, শোনেননি এলাকার সমস্যার কথা।
 এছাড়াও রয়েছে গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের সমস্যা। সাঁকরাইল ও পাঁচলার  রোড শোয়ে সেই দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসে।অভিযোগ,দল বিরোধী কাজে দল থেকে বহিষ্কৃত এক বিধায়ক ঘনিষ্ঠ নেত্রীকেই তিনি প্রচারের গুরু দায়িত্ব দিয়েছেন।   বিগত নির্বাচনে  বালতি চিহ্নে দাঁড়ানো ওই নেত্রী কে নিয়ে রোড শো  ভালো  ভাবে নিতে পারেননি দলের অনুগত পুরাতন কর্মীরা। ফলে অনেক কর্মী ই বাইরে সৌজন্য দেখালেও ভোট বাক্সে বিক্ষুব্ধতা প্রকাশ করতে পারেন।

বিদায়ী সাংসদ যে হলফনামা পেশ করেছেন তাতে স্পষ্ট বিগত পাঁচ বছরে সাংসদের সম্পত্তি বেড়েছে বেশ কয়েকগুণ---


হাওড়ায় তৃণমূল তাদের প্রার্থী ঘোষণার বেশ কিছুটা পরেই বিজেপি তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে। রন্তিদেব সেনগুপ্ত। বিশিষ্ট সাংবাদিক। সমাজের একটা অংশের কাছে যেমন নামটি পরিচিত তেমনই অনেক টা অংশের কাছে আবার অপরিচিত ও। তিনি সাংবাদিকতায় এম এ। থাকেন উল্টোডাঙার  মানিকতলা হাউজিং এ।বামপন্থী ঘরানায় বেড়ে ওঠা এবং ছাত্রাবস্থায় বামপন্থী মনোভাবাপন্ন হয়েও পরে আর এস এসে যোগ দেন।চাকরি করেছেন একটি বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রে।যদিও রন্তিদেববাবু 'র কথায় হাওড়ায় মানুষ তাকে ভোট দেবেন নরেন্দ্র মোদী কে দেখে তবু প্রসূন বন্দোপাধ্যায়ের মতো পরিচিত নামের সাথে লড়াইয়ের ময়দানে নামলে প্রচার কে যে যথেষ্ট গুরত্ব দিতে হয় সেই বিলম্বিত বোধোদয় থেকেই শেষ দিকে প্রচার, জনসভা ও রোড শো তে ঝড় তুলেছেন রন্তিদেব।যেহেতু তিনি ফ্রেশারস ক্যান্ডিডেট তাই তার কাজের মূল্যায়ন বা তার প্রতি মানুষের  অভাব অভিযোগের কোনো ঝামেলা নেই।তবে সমস্যা রয়েছে অন্য জায়গায়।

রন্তিদেববাবু যেমন শাসকদলের সিন্ডিকেট ব্যবস্থা নিয়ে সরব,তোলাবাজি নিয়ে সরব,বিদায়ী সাংসদের নারদায় ঘুষ নেওয়া নিয়ে সরব তখন হাওড়ার মানুষ সরব একসময়ের '' শেফিল্ড ' এই শহরের বৃহৎ কারখানাগুলো নিয়ে। বার্ন স্ট্যান্ডার্ড রেল অধিগ্ৰহন করবে বলেও করেনি।উল্টে  তা বন্ধের মুখে।এশিয়ার বৃহত্তম প্রেস সাঁতরাগাছি গভর্মেন্ট প্রেস মাত্র একদিনের নোটিশে বন্ধ করে দেয় কেন্দ্রীয় সরকার।জাহাজ তৈরির কারখানা ব্রিজ অ্যান্ড রুফ কোম্পানি ও বন্ধের দিকে এগোচ্ছে বলে কানাঘুষো।একসময় রমরম করে চলা এই সমস্ত কারখানার অনেক শ্রমিকেরা এখন সংসার খরচ জোগাড় করেন টোটো চালিয়ে। ভোট বাজারে  হাওড়া শহরে বন্ধ কারখানার এই বড় ইস্যুতেই শান দিচ্ছেন রন্তিদেবের বিরোধী শিবির। এছাড়া বহিরাগত তত্ত্ব তো আছেই।


'দার্জিলিঙের ডেলোয় কেলো, পিসি ভাইপো টাকা খেল ,এই  তৃণমূল আর না ' বা  'বিকাশ এমন করলে কাকা গ্যাসের দাম আজ হাজার টাকা' এই বিজেপি আর না -একদিকে রাজ্য সরকারের আর্থিক কেলেঙ্কারি অপরদিকে কেন্দ্রের জন বিরোধী নীতি এই দুই অস্ত্রে শান দিয়ে বামফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী সুমিত্র অধিকারী ঝড় তুলছেন প্রচারে।২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত তিনটি নির্বাচনে এই কেন্দ্রের দখল তৃণমূলের হাতে থাকলেও ১৯৯৬ এ যেমন কংগ্রেসের  প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি এই কেন্দ্রে জয়লাভ করেছিলেন তেমনই বাম প্রার্থী স্বদেশ চক্রবর্তী এই কেন্দ্র থেকেই পর পর দুবার জয়ী হন।  তারও আগে সিপিএম এর সমর মুখোপাধ্যায় পর পর তিনবার জিতে সাংসদ হয়েছিলেন এই কেন্দ্র থেকেই। সুতরাং ফলাফলেই স্পষ্ট , হাওড়ায় সব দলের ই ভোটার আছে।
সুমিত্র এসএফআই এর দীর্ঘদিনের নেতা,আইন পড়া ঝকঝকে তরুণ। ২০১৪ নির্বাচনে প্রসূন পেয়েছিলেন ৪,৮৮,৪৬১টি ভোট। দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন সিপিএম এর শ্রীদীপ ভট্টাচার্য্য ।প্রাপ্ত ভোট ২,৯১,৫০৫ । তৃতীয়, কংগ্রেসের মনোজ কুমার পান্ডে।প্রাপ্ত ভোট ৬৩,২৫৪টি। ব্যবধান অনেকটাই বেশি। এবারের কংগ্রেসের প্রার্থী শুভ্রা ঘোষ আরো পিছবেন এই নির্বাচনে,জনমত সমীক্ষা অন্তত তাই বলছে।তাই হাওড়ায় লড়াই হবে ত্রিমুখী-।

আমাদের টিম সমীক্ষা চালিয়েছিল হাওড়ার অলি গলি থেকে রাজপথ হয়ে ট্রেন বাস সর্বত্র। একথা নিঃসন্দেহ মানুষের কাছে তৃণমূলের জনপ্রিয়তা কমেছে অনেকটাই।যারা সক্রিয় ভাবে রাজনীতি করেননা অথচ রাজনৈতিক সচেতন তারা জানিয়েছেন তাদের পছন্দ রন্টিদেব। বিজেপির প্রাপ্ত ভোটের একটা বড় অংশই এবার আসবে বাম শিবির থেকে,আমাদের সমীক্ষায় অন্তত সেটাই উঠে এসেছে।তৃণমেলের বিক্ষুব্ধদের একটা অংশ এবার গোপনে ভোট দেবেন গেরুয়া শিবিরকেই।
উল্লেখযোগ্যভাবে এবার হাওড়া কেন্দ্রে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসতে পারে বেজেপি।২০১৪ নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন বাম প্রার্থী এবং তৃতীয় স্থানে ছিল কংগ্রেস। সমীক্ষা বলছে কংগ্রেস চলে যেতে পারে চতুর্থ স্থানে। আসলে প্রধান যে সমস্যা সেটি হল, সব দলের ই ভোটার আছে কিন্তু যথেষ্ট কর্মী নেই।আর এই জায়গায় টেক্কা দিচ্ছে তৃণমূল। মানুষ বিরুপ, গোষ্ঠী কোন্দল সবকিছুই ঢেকে যাচ্ছে  কর্মকর্তা ও কর্মীদের প্রচারের  ব্যাপকতায়। সমীক্ষায় স্পষ্ট,প্রসূন বন্দোপাধ্যায়ের প্রাপ্ত ভোট এবার অনেকটাই কমবে ২০১৪ র তুলনায়। হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে যে সাতটি  বিধানসভা কেন্দ্র আছে তাদের মধ্যে বালি এবং মধ্য হাওড়া কেন্দ্রের ভোটাররাই প্রসুনের জয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ ফ্যাক্টর হতে পারে।

No comments:

Post a Comment

হাওড়া শ্যামপুরে বাছরী যুব সংঘে মা সাজবেন রেশমী সুতোর সাজে

অর্পণ দাস:  হাওড়া গ্রামীণ অঞ্চলের শ্যামপুর থানার বাছরী গ্রামের "বাছরী যুব সংঘের" সার্বজনীন দুর্গোৎসবের এবছর ৫৩ তম বর্ষ । বিগত...