Saturday, April 13, 2019

রামরাজাতলার রাম ঠাকুরের কেন এত বড় গোঁফ!

রামরাজাতলা রামমন্দিরের মতো ব্যতিক্রম আছে খুবই কম

রণতোষ মুখার্জি : হাওড়া জেলার সাঁতরাগাছি অঞ্চলের পরিচিতি খুব প্রাচীনকাল থেকেই। তুলনামূলকভাবে রামরাজাতলা-র খ্যাতি মাত্র ২৫০ বছরের। সাঁতরাগাছি-র প্রখ্যাত জমিদার অযোধ্যারাম চৌধুরী রাজবেশধারী রাম-সীতার পুজো প্রবর্তন করার কিছুদিন পর থেকেই রামমন্দির সন্নিহিত এলাকা রামরাজাতলা নামে পরিচিতি লাভ করে। কথিত আছে রামভক্ত অযোধ্যারাম চৌধুরী স্বপ্নাদেশে শ্রী রামচন্দ্রের পুজো করার নির্দেশ পান । সেই স্বপ্নাদেশের রূপায়নে তিনি উদ্যোগী হন বিশালাকারে এবং বারোয়ারি পুজোর আদলে রামসীতার পূজার্চনা করতে। কিন্তু সেই সময় এই এলাকায় বারোয়ারি সরস্বতী পুজোর খুব খ্যাতি ছিলো এবং আপামর গ্রামবাসী এই পুজোয় মেতে উঠতো। ফলে একদল গ্রামবাসী বারোয়ারি রাম পুজোর বিরোধীতা করলেন । দুদলের ধারাবাহিক আলোচনায় শেষমেষ এই সিদ্ধান্ত হলো যে, রামসীতার পুজোই বড় করে হবে, কিন্তু সরস্বতী পুজোর দিন প্রতিমা নির্মাণের সূচনা হবে বাঁশ কাটা এবং প্রারম্ভিক পুজোর মধ্য দিয়ে। আর রামসীতার মূর্তির উপরের দিকে অবস্থান করবেন দেবী সরস্বতী । সেই থেকেই এখনও অবধি সরস্বতী পুজোর দিন ষষ্ঠীতলার নির্দিষ্ট বাঁশঝাড় থেকে বাঁশ কাটার পরে চৌধুরীপাড়ায় শিবমন্দিরে বাঁশ পুজোর মাধ্যমে রামসীতার মূর্তি গড়ার প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু হয়। এর অল্প কিছুদিন পর থেকেই রামরাজাতলা বাজারের আটচালায় কুমারটুলির প্রতিমা শিল্পী গৌর পালের বংশধর-রা প্রতিমা নির্মাণ শুরু করেন। বার্ন কোম্পানির তৈরি করা বিশাল এক লোহার ট্রলির উপর মূর্তি র কাঠামো তৈরি হয়।

  আড়াইশো বছরেরও বেশী প্রাচীন এই পুজো প্রথমে তিনদিন, তারপর পনের দিন, আরও পরে একমাস ধরে চলতো। বর্তমানে চৈত্র বা বৈশাখ মাসে রামনবমী তিথিতে শুরু হয়ে শ্রাবণ মাসের শেষ রবিবার পর্যন্ত রাম পুজো ও সেই উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত মেলা চলতে থাকে । আগে এই পুজো চলাকালীন প্রতি শনি ও রবিবার যাত্রাপালার আসর বসতো। সেসব এখন আর হয়না ঠিকই, তবে প্রতিদিন পুজো, ভোগ নিবেদন, সন্ধ্যারতি ইত্যাদি চালু আছে। মন্দিরের ২৭ কাটা সম্পত্তির মধ্যে আছে ব্যাজার,পুকুর এবং বেশ কিছু দোকানঘর।ঠাকুরের নির্দিষ্ট ভোগের ঘর আছে।প্রতিদিন সামান্য কিছু দক্ষিনা র বিনিময়ে বাড়িতে ভোগ নিয়ে যাবার ব্যবস্থা আছে।মন্দিরের সম্পত্তি থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে ভালোভাবেই চলে পুজোর খরচ।এছাড়া ভক্তদের দান তো আছেই।


রাবণবধের পরে সপারিষদ রাজা রাম ও সীতার মূর্তি এখানে পূজিত হয়। সঙ্গে আছেন মহাদেব, ব্রম্ভ্রাসহ মোট ২৬ টি প্রতিমা। অবশ্যই রামসীতার মাথার উপরের দিকে অবস্থান করছেন পাঁচটি সরস্বতী প্রতিমা। এছাড়া আছেন দেবী জগদ্ধাত্রী-র দুটি মূর্তি, এক্কেবারে উপরে বসুদেব, রামের দুইপাশে লক্ষণ, ভরত, শত্রুঘ্ন, বিভীষণ, হনুমান, জাম্বুবান, শিবের অনুচর নন্দী-ভৃঙ্গি। পাশে আলাদা ভাবে আছে মহাবীর হনুমানের মূর্তি, সাবিত্রী-সত্যবান এবং বিষ্ণুর বামন অবতারের মূর্তির আলাদা মন্দিরকক্ষ ।

রামরাজাতলার কাছেই ইছাপুরে পূজিত হন সৌম্যচন্ডী, বাকসাড়ায় নতুন ও পুরাতন নবনারী । রামনবমীর দুদিন আগে সপ্তমীর দিন পুজো শুরু হয় সৌম্যচন্ডীর, অক্ষয় তৃতীয়া ও বুদ্ধপূর্ণিমাতে নতুন ও পুরাতন নবনারীর পুজোর সূচনা হয় । তবে কেবল রামরাজাতলাতেই চারমাস ব্যাপী মেলা চলে, যা ভারতের দীর্ঘতম মেলা।

অযোধ্যারামের সাত পুত্রের মধ্যে রামজীবন এবং মধুসূদনের বংশধরেরা  স্থানীয় মানুষের সহযোগিতায় চালু রেখেছে রামতলার এই ঐতিহ্যমন্ডিত পুজো ও মেলা।অযোধ্যারামের কুলোপুরহিত হলোধর ন্যায়রত্ন যিনি এই  প্রথম এই পুজো করেছিলেন সেই থেকে  তার বংশধরেরা এই পুজো করে আসছেন।

এখানে ঢুকতেই বাম দিকে  গদা হতে বিশাল হনুমানের মূর্তি।মনে করা হয় উনি রামচন্দ্রের রাজসভার প্রধান প্রহরী। আর যেটি এই বঙ্গদেশে বিরল ত হলো  এখানে প্রত্যেক পুরুষ দেবতার মোটা গোঁফ।মনে করা হয়,অযোধ্যারাম আদতে উত্তর ভারতের বাসিন্দা ছিলেন।তাই মূর্তি কল্পনায় উত্তর ভারতীয় পালয়ানি গোঁফের অবতারণা।
(লেখাটি লেখকের নিজস্ব,কপি পেস্ট করবেননা। শেয়ার করতে পারেন)।ছবি নীলাঞ্জন মৈত্র।

1 comment:

  1. ভালো লাগলো রামরাজাতলার বিখ্যাত পূজা নিয়ে লিখিত প্রতিবেদনটি।এই ইতিহাস বর্তমান প্রজন্মের জানা উচিত। হাওড়ার এই পূজা ঐতিহ্য বহনকারী।লেখককে ধন্যবাদ বিষয়টি জন সমক্ষে নিয়ে আসার জন্য।

    ReplyDelete

হাওড়া শ্যামপুরে বাছরী যুব সংঘে মা সাজবেন রেশমী সুতোর সাজে

অর্পণ দাস:  হাওড়া গ্রামীণ অঞ্চলের শ্যামপুর থানার বাছরী গ্রামের "বাছরী যুব সংঘের" সার্বজনীন দুর্গোৎসবের এবছর ৫৩ তম বর্ষ । বিগত...