পৃথ্বীশরাজ কুন্তী: আজ নীলষষ্ঠী।সারারাত নীলাচলের বিয়েকে কেন্দ্র করে এই লোকউৎসবে মেতে উঠবে বাংলা।নীলষষ্ঠীর রাতে মানুষকে আনন্দদানের উদ্দেশ্যে প্রায় ১০০ বছর আগে হাওড়ায় উৎসারিত হয়েছিল 'কালিকাপাতাড়ি নৃত্য'।ছৌ,টুসু,,ঝুমুর,ব্রিতা,নাচনি নৃত্যের ন্যায় বঙ্গ লোকসংস্কৃতির অন্যতম অঙ্গ হাওড়া জেলার এই নিজস্ব সংস্কৃতি ভারতপ্রসিদ্ধ 'কালিকাপাতাড়ি লোক নৃত্য'।উল্লেখ্য,সমগ্র ভারতের মধ্যে হাওড়া জেলার শ্যামপুর,বাগনান ও আমতায় এই অবলুপ্তপ্রায় লোকনৃত্যের চল আছে।একটু ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখা যাক।আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে অর্থাৎ বিংশ শতকের সূচনা লগ্নে কালিকাপাতাড়ি বা কালকেপাতাড়ি নৃত্যের উদ্ভব।মূলত,শিবচতুর্দশী ও নীলষষ্ঠীর রাতে শিবের ব্রত করা মহিলাদের জাগিয়ে রাখতে ও আনন্দদানের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন জায়গায় এই লোকশিল্প পরিবেশিত হত।প্রধানত, পুরাণ ও মহাকাব্যের ভিত্তিতে মুখে মুখে রচিত হয় এক একটি টুকরো কাহিনী।বাদ্যযন্ত্র সহকারে এই কাহিনীগুলিই অভিনীত হয়।কাহিনীগুলি পুরাণ ও মহাভারতের এমন সমস্ত অংশ থেকে গৃহীত হয় যেখানে শক্তির প্রদর্শন হয়।
শিব-দূর্গা-কালী অশুভ শক্তির বিনাশ করে স্থলে-জলে-অন্তঃরীক্ষে তথা ত্রিভুবনে কীভাবে শান্তির বাণী পৌঁছে দিয়েছিলেন তা প্রধানত তুলে ধরা হয় হাওড়া প্রত্যন্ত গ্রামীণ মানুষের কাছে এই নৃত্যের মধ্য দিয়ে।বিভিন্ন বেশভূষায় সুসজ্জিত হয়ে কলাকুশলীরা পালায় অংশ নেন।অন্যদিকে মঞ্চের বাইরে থেকে পুতুল নৃত্যের ন্যায় সঞ্চালনা করেন একজন ব্যক্তি।সাথে ঢোল-মাদল-কাঁসরের রব।এভাবেই মনোরঞ্জন করেন কলাকুশলীরা।সময়ের সাথে সাথে এই নৃত্য হারিয়েছে তার জৌলুস,হারিয়েছে তার স্বরূপ।
বর্তমানে শ্যামপুরে ৩টি দলে মোট ৫০ জন শিল্পী আছেন। এক একটি দলে ১৫ থেকে ২০ জন করে শিল্পী প্রাচীন এই শিল্পে অভিনয় করেন।কিন্তু,দুর্ভাগ্যের বিষয় নব প্রজন্মের কোনো মুখ এই লোক-নৃত্যজগতে না আসায় হয়তো অচিরেই ইতিহাসের পাতায় খোদিত হবে এই নৃত্যের নাম এমনি আশঙ্কা বলরাম দাসের ন্যায় সুদক্ষ কালিকাপাতাড়ি নৃত্য শিল্পীর।যদিও বলরামবাবু ও তাঁর ন্যায় প্রত্যন্ত গ্রামের কিছু মানুষ নিজ পেশাকে বজায় রেখে আজও সমগ্র ভারতের বুকে হাওড়া জেলার এই অনন্য গৌরবকে তুলে ধরে চলেছেন কালীকার উদ্দাম মোনোমুগ্ধকর নৃত্যের মধ্য দিয়ে।আর এভাবেই নীলষষ্ঠীর রাতকে মানুষের কাছে আনন্দমুখর করে তোলে অবলুপ্তপ্রায় এই লোকনৃত্য।
ছবি, লেখকের ।



No comments:
Post a Comment