Thursday, July 4, 2019

মৌড়ির রথযাত্রায় জগন্নাথ দেবের সাথে ভিন্ন রথে যাত্রা করেন কুন্ডুচৌধুরীদের কূলদেবতা লক্ষ্মী-জনার্দনও


রণতোষ মুখোপাধ্যায়:-  মৌড়ি রথতলা- সারা বছর আটপৌরে এই নাম শুধুমাত্র একটা স্থান হয়ে থাকলেও আষাঢ়ের এই দিনটায় স্থান-কাল পাত্র ভেদে হয়ে ওঠে মহামিলন ক্ষেত্র।
আজ থেকে ৩০০ বছরেরও আগে মহিয়াড়ীর তৎকালীন জমিদার রমাকান্ত কুন্ডুচৌধুরীর বংশধররা একসময়ে পারিবারিক যে রথযাত্রার প্রচলন করেছিলেন আজ তা আশেপাশের বেশকয়েকটি গ্ৰামের মানুষের কাছে ঐতিহ্যের অহংকার, বিন্দুতে সিন্ধু দর্শনের মতো ঘর থেকে  দুই পা এগিয়ে শ্রীক্ষেত্র ছোঁয়া।
           (   রথে বিগ্ৰহ স্থাপনের আগে প্রদক্ষিণ)


যদিও কুন্ডুচৌধুরীদের আদি বাস মেদিনীপুরের তমলুকে। ১৭৭০-এ পূর্বপুরুষ কুশদেবের বংশধররা শুরু করেন ঝাঁটার কাঠি আর নুনের ব্যবসা। সেই সূত্রেই তাদের আন্দুল-মৌড়িতে আসা। উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি এই আন্দুল-মৌড়ি সংলগ্ন জমিদার বাড়ি তৈরি হয়। দুর্গাদালানেই প্রতিষ্ঠা পান কূলদেবতা লক্ষ্মী-জনার্দন। মৌড়ির রথযাত্রায় জগন্নাথ দেবের সাথে অন্য একটি রথে  কুন্ডুচৌধুরীদের কূলদেবতা লক্ষ্মী-জনার্দনও যাত্রা করেন ৫০০ মিটার পথ।




ধাতুর তৈরি ১২ ফুটের রথটি নির্দিষ্ট জগন্নাথদেবের জন্য, আর ধাতুরই গড়া আরেকটি ১৮ ফুটের রথে থাকেন কূলদেবতা লক্ষ্মী-জনার্দন। শুরুর দিকে রথদুটি ছিল কাঠের, পরবর্তীতে  কুন্ডুচৌধুরীরা একটি বিশালাকার লোহার তৈরি রথ তৈরি করেন। সেই রথ বার কয়েক চলার পর অতিরিক্ত উচ্চতার কারনে নানান সমস্যার মুখে পড়ে ।একটা সময় মৌড়ি রথতলা দিয়ে যেতে গেলে চোখে পড়ত সেই বিশালাকার রথের স্থবির জরাজীর্ণ চেহারা টা।

                           (জগন্নাথ দেব)


  বছর  খানেক আগেও এই রথযাত্রাকে কে কেন্দ্র করে মৌড়ি রথতলা সংলগ্ন রাস্তার দুধারে হরেক কিসিমের পসরা নিয়ে বসত বিভিন্ন দোকান, বিকিকিনি চলত  সপ্তাহব্যাপী। এখন কেনাবেচার মূল আকর্ষণ মেলার দিনেই। উল্টোরথ পর্যন্ত এখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে শুধু কয়েকটি জিলিপি-বাদামভাজার দোকান।



তবে স্থানীয় আমবাগান মাঠে এখন পুরোদস্তুর মেলা বসায় একটি ক্লাব। আর রথের মেলায় দিন কি থাকে না এই মেলায়! জিলিপি-পাঁপড়,ঘুগনির পাশাপাশি  বিভিন্ন প্রজাতির  গাছ, রঙিন মাছ ,  সবই মেলে মেলায়।

                    (কুন্ডু চৌধুরী দের কূলদেবতা)

 রথযাত্রার দিন সকালে,   রথে বিগ্রহ স্থাপনের আগে , মন্দির থেকে বিগ্রহ এনে ৯ বার প্রদক্ষিণ করা হয়।  আগে দুটি রথেরই যাত্রাপথ ছিল মৌড়ি রথতলা থেকে খটিরবাজারে সরস্বতী নদীর তীরে 'মাসির বাড়ি' পর্যন্ত । সংস্কারের অভাবে সেই 'মাসির বাড়ি' আজ জরাজীর্ণ অবস্থায় । তাই বর্তমানে  রথের  একটি  যায়  মৌড়ি তালপুকুরধার পর্যন্ত অপরটি খটির বাজার পর্যন্ত।
 ধর্মানুষ্ঠান শেষে বিগ্রহ দিনের দিন ই ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয় মন্দিরে। জানা যায়, উল্টোরথের দিন পর্যন্ত 'মাসির বাড়ি' তে ভগবানের ছবিতে চলে পূজার্চনা।
উল্টোরথের দিন আবার ও বিগ্ৰহ সহযোগে স্বস্থানে ফিরে আসে রথ। রথের ইতিহাস বুকে নিয়ে নির্বাক শ্রোতা হয়ে আবারও  বছর ঘোরার অপেক্ষায় থাকে আন্দুল-মৌড়ি রথতলা।



No comments:

Post a Comment

হাওড়া শ্যামপুরে বাছরী যুব সংঘে মা সাজবেন রেশমী সুতোর সাজে

অর্পণ দাস:  হাওড়া গ্রামীণ অঞ্চলের শ্যামপুর থানার বাছরী গ্রামের "বাছরী যুব সংঘের" সার্বজনীন দুর্গোৎসবের এবছর ৫৩ তম বর্ষ । বিগত...