Thursday, July 4, 2019

ভারতবর্ষ তথা বিশ্বের ২য় প্রাচীন (প্রথম- পুরীর রথযাত্রা) পশ্চিমবঙ্গের এই রথ!



৬২৩ বছরে পা দিল মাহেশের রথ

পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার শ্রীরামপুরের বিখ্যাত এই মাহেশের রথযাত্রা ভারতবর্ষ তথা বিশ্বের ২য় প্রাচীন (প্রথম- পুরীর রথযাত্রা) ও পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বৃহৎ

মাহেশের জগন্নাথ মন্দিরের উৎপত্তির ইতিহাস

ঐতিহাসিক মতে, খ্রিস্টীয় ১৪ শতকে, শ্রী ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারীর হাতে এই রথযাত্রা উৎসবের সূচনা হয়। শ্রী ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী ছিলেন একজন বাঙালি সন্ন্যাসী, যিনি পুরীতে গিয়েছিলেন তীর্থ করতে। সেখানে তিনি, পুরীর শ্রী জগন্নাথ মন্দিরে, শ্রী জগন্নাথ দেবকে স্বহস্তে 'ভোগ' অর্পণ করতে চান। কিন্তু পুরীর মন্দিরের পূজারীদের বাধায় তা হয়ে ওঠে নি। ভগ্ন হৃদয়ে ধ্রুবানন্দ অনশনে মৃত্যু বরণ করার সিদ্ধান্ত নেন। অনশনের তৃতীয় দিনে তিনি স্বপ্নে শ্রী জগন্নাথ দেবকে দেখতে পান ও তাঁর বাণী শুনতে পান। শ্রী জগন্নাথ তাঁকে বলেন বঙ্গে ফিরে, ভাগীরথী নদীর তীরে মাহেশ বলে একটি স্থানে উপাসনা করতে। সেখানে তিনি ধ্রুবানন্দকে একটি বৃহৎ 'দারু-ব্রহ্ম' (নিম গাছের গুঁড়ি) পাঠাবেন। যা দিয়ে ধ্রুবানন্দ যেন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি নির্মাণ করে ভোগ প্রদান করেন। স্বপ্নাদেশ পেয়ে ধ্রুবানন্দ মাহেশে চলে আসেন ও উপাসনা করতে থাকেন। অবশেষে এক ভয়ানক ঝড়-জলের রাত্রে, নদীতে এক বিশাল দারু-ব্রহ্ম ভেসে সেখানে আসে ও ধ্রুবানন্দ জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেটিকে ডাঙায় তোলেন। সেই দারু-ব্রহ্ম দিয়ে তিনি মূর্তি নির্মাণ করেন ও মাহেশে জগন্নাথ দেবের মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।



★ শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর আগমন।

এরপরে শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু সন্ন্যাস নিয়ে পুরী যাওয়ার পথে মাহেশে আসেন। সেখানে জগন্নাথ মন্দির দর্শন করেন ও মাহেশের জগন্নাথ বিগ্রহ দেখে প্রথমে অজ্ঞান হয়ে যান ও পরে গভীর সমাধি নেন। ধ্রুবানন্দ তাঁকে মন্দিরের দায়িত্ব নিতে বলেন। মহাপ্রভু তাঁর বদলে শ্রী কমলকার পিপলাইকে মন্দিরের দায়িত্ব দিতে বলেন। শ্রী কমলকার পিপলাই ছিলেন মহাপ্রভুর ১২ জন গোপালের ৫মতম। ধ্রুবানন্দ, মহাপ্রভুর নির্দেশ মেনে তাই করেন এবং এর কিছুদিন পরেই ধ্রুবানান্দ ব্রহ্মচারীর মৃত্যু হয়।

★ মাহেশের রথ যাত্রার উৎপত্তির ইতিহাস।

শ্রী কমলকার পিপলাই বংশগত পরিচয়ে ছিলেন, সুন্দরবনের খালিজুলির জমিদারের পুত্র। তিনি নীতি শাস্ত্র অধ্যয়নের জন্য নবদ্বীপ যান ও শ্রী মহাপ্রভুর শিষ্য হন। তিনি মাহেশের জগন্নাথ মন্দিরের ৬৪জন মহান্তের প্রথম মহান্ত। শ্রী কমলকার পিপলাই ১৩৯৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতের ও বিশ্বের ২য় প্রাচীন ও বাংলার সর্ব বৃহৎ, মাহেশের রথযাত্রার সূচনা করেন।

★ মাহেশের শ্রী জগন্নাথের পুরাতন মন্দির ও রথগুলির ইতিহাস।

শ্রী কমলকার পিপলাই, যে রথ নির্মাণ করিয়েছিলেন ও যে জগন্নাথ মন্দিরের মূল সেবায়েত ছিলেন, তার কোনওটাই এখন আর নেই। বর্তমানে থাকা, মাহেশের জগন্নাথ মন্দিরটি ১৭৫৫ সালে, কলকাতার পাথুড়িয়াঘাটার শ্রী নয়নচাঁদ মল্লিক, ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করান।
● ১৩৯৬ খ্রিস্টাব্দে হওয়া মাহেশের প্রথম রথযাত্রা।
● শোনা যায় যে, বৈদ্যবাটির কোনও এক ব্যক্তি তার পরে এখানে একটি রথ দান করেছিলেন।
● ১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দে, শ্রী রামকৃষ্ণের শিষ্য বলরাম বসুর পিতামহ, শ্রী শ্রী কৃষ্ণরাম বসু এখানে একটি রথ দান করেন।
● ১৮৩৫ সালে, তার পুত্র গুরুপ্রসাদ বসু, পুনরায় একটি রথ মাহেশের মন্দিরে দান করেন। কিন্তু আগুন লেগে সেই রথটি ভস্মীভূত হয়।
● এরপরে শ্রী কালাচাঁদ বসু, ১৮৫২ সালে, মন্দিরের জন্য পুনরায় একটি রথ বানিয়ে দেন। কিন্তু সেই রথের ভেতরে কোনও এক ব্যক্তি আত্মহত্যা করেন।
● এই ঘটনা কে অশনি সংকেত বর্ণনা করে, শ্রী বিস্মম্ভর বসু, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে পুনরায় একটি নতুন রথ বানিয়ে দেন। কিন্তু সেটিও আগুন লেগে ভস্মীভূত হয়।

★ মাহেশের বর্তমান রথের ইতিহাস।
বর্তমানে মাহেশের রথ যাত্রায় ব্যবহৃত লোহার রথটি, দিওয়ান কৃষ্ণচন্দ্র বসু, 'মার্টিন-বার্ন' কোম্পানিকে দিয়ে নির্মাণ করান। বাংলা নবরত্ন স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এই লোহার রথটিতে ১২টি চাকা আছে ও রথটি ৫০ ফুট উঁচু।

★ সাহিত্যে মাহেশের রথযাত্রা।
শ্রী বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত 'রাধারানী' উপন্যাসে, মাহেশের প্রাচীন রথযাত্রার অলংকৃত বর্ণনা পাওয়া যায়।





collected

No comments:

Post a Comment

হাওড়া শ্যামপুরে বাছরী যুব সংঘে মা সাজবেন রেশমী সুতোর সাজে

অর্পণ দাস:  হাওড়া গ্রামীণ অঞ্চলের শ্যামপুর থানার বাছরী গ্রামের "বাছরী যুব সংঘের" সার্বজনীন দুর্গোৎসবের এবছর ৫৩ তম বর্ষ । বিগত...