Monday, July 22, 2019

পবিত্র শ্রাবণের প্রথম সোমবার, শৈব তীর্থ তারকেশ্বরে শৈবভক্তের ঢল


রণতোষ মুখোপাধ্যায়-  ১৯৭৭সালের বাংলা ছবি 'বাবা তারকনাথ'এ সন্ধ্যা রায়ের তারকেশ্বর ধামে যাএা একদিকে যেমন তারকেশ্বর মহিমাকে পুননবীকৃত করেছিল তেমনই তারকেশ্বর যাএাকে  সর্বজনীন করে তুলতেও  বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিল।প্রাচীন কিংবদন্তি কে মাথায় রেখেই একথা অনস্বীকার্য।

বিদ্বজ্জনেরা বলেন,তারকলিঙ্গ দর্শনেই পাপরাশি ভষ্মীভূত হয়,  স্পর্শনে অদ্বৈতজ্ঞান জন্মায় এবং চরনামৃত পানে মুক্তিপথের অধিকারী হওয়া যায়। অসংখ্য শ্রদ্ধাবান ভক্ত  রোগ ব্যাধি ও বিভিন্ন কষ্ট লাঘবের জন্য বাবার কৃপা প্রার্থী হয়ে মন্দির চত্বরে ধর্না দেয় আজও। চিরজাগ্রত তারকনাথের অনুকম্পায় দৈব ঔষধে বহু মানুষের রোগমুক্তির কথা আজও লোকের মুখে মুখে ফেরে।.    তারকেশ্বর হুগলি জেলার একটি পৌর শহর।এটি উক্ত জেলার চন্দননগর মহকুমার একটি থানাও বটে।প্রসিদ্ধ হিন্দু তীর্থক্ষেত্র কলকাতা থেকে ৫৮ কিলোমিটার দূরে অবস্হিত এই শহর রাজ্যের প্রসিদ্ধ শৈব তীর্থক্ষেত্র।এই জুলাই-অগাষ্ট মাসে তারকেশ্বরের পথে কাঁধে বাঁক নিয়ে হাঁটেন দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা পুণ্যার্থীরা।


সাধারণ থেকে সুদৃশ্য,  আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার  সেই সারি নিজ নিজ এলাকার গঙ্গা থেকে বা বৈদ্যবাটির নিমাই তীর্থ ঘাট থেকে বাঁকে জল নিয়ে পৌঁছন তারকেশ্বর।.    হুগলি জেলার এই মন্দিরের ইতিহাস অতি প্রাচীন। কিংবদন্তি জানায়, বিষ্ণুদাস নামে জনৈক শিবভক্ত অযোধ্যা থেকে হুগলিতে এসে সপরিবারেই সেখানে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু স্থানীয় লোকজন তাঁকে সন্দেহের চোখে দেখতেন। খানিকটা একঘরে হয়েই বাস করতেন বিষ্ণুদাস। পরিস্থিতি এমনটাই হয়ে দাঁড়ায় যে, বিষ্ণুদাসকে স্থানীয় মানুষ বাধ্য করে কঠিন পরীক্ষা দিয়ে প্রমাণ করতে যে, তিনি সৎ মানুষ। বিষ্ণুদাসকে তপ্ত লোহার একটি দণ্ডকে খালি হাতে ধরতে বলা হয়। তিনি তা-ই করেন। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। সেই সঙ্গে মনে গভীর যন্ত্রণা অনুভব করতে থাকেন। তিনি তাঁর ইষ্টদেবতা মহাদেবকে ডাকতে থাকেন এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধারের জন্য।



• কয়েকদিন পরে বিষ্ণুদাসের ভ্রাতা স্থানীয় জঙ্গলে এক আশ্চর্য বিষয় লক্ষ্য করেন। তিনি দেখেন, গরুরা প্রতিদিন জঙ্গলের একটি বিশেষ স্থানে গিয়ে দুধ দিয়ে আসে। তিনি এই স্থানে গিয়ে একটি পাথর দেখতে পান।

• এই সময়েই বিষ্ণুদাস স্বপ্নাদেশ পান যে, জঙ্গলে তাঁর ভাইয়ের দেখা ওই পাথরটিই মহাদেবের তারকেশ্বর রূপ। সেখানে বিষ্ণুদাস একটি মন্দির নির্মাণ করেন। এবং সেই স্থানই তারকেশ্বর ধাম নামে পরিচিত হয়।

• সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারকেশ্বর মন্দির অনেকবার নির্মিত ও পুনর্নির্মিত হয়েছে।   ১৭২৯ সালে বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজা ভারামল্ল প্রাচীন এই মন্দির নির্মাণ করান।আজকের আটচালা মন্দিরটি তৈরি করেন শিয়াখালার গোবর্ধন রক্ষিত।

 তারকেশ্বর মন্দির বাংলার চালা স্থাপত্যের আদর্শ উদাহরণ। যে ক’টি প্রাচীন চালা মন্দির বাংলায় টিকে রয়েছে, তার মধ্যে তারকেশ্বর অন্যতম।

• তারকেশ্বর স্বয়ম্ভূলিঙ্গ। এই লিঙ্গের মহিমা অপার।

• প্রাচীন এই কিংবদন্তির সঙ্গে কালে কালে যুক্ত হতে থাকে দেবমহিমা। তারকেশ্বর মন্দির-সংলগ্ন পুষ্করিণী দুধপুকুরকে ঘিরেও গড়ে ওঠে মিথ।

     হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, এই পুকুরে ডুব দিয়ে স্নান করলে যাবতীয় মনস্কামনা পূর্ণ হয়।রামকৃষ্ণ পরমহংসের পত্নী   সারদা দেবী একাধিকবার এই মন্দিরে পূজা দিতে এসেছিলেন।


শ্রাবণ মাস শৈবদের কাছে বিশেষ পবিএ মাস।এই মাসের সোমবারগুলিতে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে তারকনাথকে স্নান করানোর উদ্দেশ্যে।এবারও তার অন্যথা হয়নি,আসলে পুণ্য আর বিশ্বাসের হাত ধরেই তো দেবমহিমা গড়ে ওঠে, ।
' তুমি পাথর না কি প্রাণ - আজ তোমার পরীক্ষা ভগবান'--  আর এই উওর খুঁজতে ক্রমেই বাড়তে থাকে পুণ্যার্থীদের ভিড়।




No comments:

Post a Comment

হাওড়া শ্যামপুরে বাছরী যুব সংঘে মা সাজবেন রেশমী সুতোর সাজে

অর্পণ দাস:  হাওড়া গ্রামীণ অঞ্চলের শ্যামপুর থানার বাছরী গ্রামের "বাছরী যুব সংঘের" সার্বজনীন দুর্গোৎসবের এবছর ৫৩ তম বর্ষ । বিগত...