বর্গী হানার আগাম সংকেত মিলত খটিরবাজারের এই গম্বুজ (টাওয়ার)থেকে

পলাশ পোড়েল :-উনিশ শতকের প্রথম দিকে (১৮২০-৩৩) ভারত সরকার কলকাতা থেকে বিহারের চুনার পর্যন্ত সিমাফোর পদ্ধতিতে খবর পাঠাবার জন্য প্রতি আট মাইল অন্তর একশো ফুট উঁচু ইটের স্তম্ভ নির্মাণ করেন। টেলিগ্রাফ উদ্ভব হবার পূর্বে সংকেত মারফৎ এটাই ছিল বার্তা পাঠানোর একমাত্র পদ্ধতি। পুরনো মানচিত্রে এই গুলো টেলিগ্রাফ স্টেশন হিসাবে দেখানো হয়েছে।  ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ হতে শুরু করে  উত্তর পশ্চিম দিকে হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া জেলা এবং বিহারের কিছু অংশে এইরকম কয়েকটি স্তম্ভ নির্মিত হবার পর তারবার্তা প্রেরণের আধুনিক উপায়টি আবিষ্কার হলে এই প্রকল্প পরিত্যক্ত হয়।
            *    ইটের তৈরি গোল বেড়ের চারতলা ও ওপরের দিকে ক্রমশঃ সরু এই স্তম্ভগুলি সব এখন জীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভিতরের ফাঁপা অংশে সিঁড়ি দিয়ে কাঠের মেঝে যুক্ত প্রতি তলায় উঠতে হতো।  পরবর্তী কালে পরিত্যক্ত স্তম্ভগুলি জরিপের কাজে ব্যবহার হয়। এই কৌতূহলোদ্দীপক স্মৃতিচিহ্নগুলিকে একধরনের পুরাকীর্তি বলা যায়।
                 *   সিমাফোর পদ্ধতিতে সংবাদ প্রেরণ সম্পর্কে ও'ম্যালী এবং মনোমোহন চক্রবর্তী জেলা গেজেটিয়ারে লিখেছেন — In the first quarter of the 19th century an experimental semaphore telegraph system was tried between Calcutta and chunar. The experiment proved a failure and was abandoned before 1830 in which year some of the semaphore towers were utilised for the Trigonometric survey of India.
                 *  উইকিপিডিয়ায় এর সম্পর্কে বলা হয়েছে— A semaphore telegraph is a system of conveying information by means of visual signals, using towers with pivoting shutters, also known as blades or paddles. Information is encoded by the position of the mechanical elements; it is read when the shutter is in a fixed position. The most widely used system was invented in 1792 in France by Claude Chappe, and was popular in the late eighteenth to early nineteenth centuries.Lines of relay towers with a semaphore rig at the top were built within line-of-sight of each other, at separations of 5 to 20 miles. Operators at each tower would watch the neighboring tower through a spyglass, and when the semaphore arms began to move spelling out a message. They would pass the message on to the next tower. This system was much faster than post riders for conveying a message over long distances, and also had cheaper long-term operating costs, once constructed. Semaphore lines were a precursor of the electrical telegraph, which would replace them half a century later, and would also be cheaper, faster, and more private. The line-of-sight distance between relay stations was limited by geography and weather, and prevented the optical telegraph from crossing wide expanses of water, unless a convenient island could be used for a relay station. Modern derivatives of the semaphore system include flag semaphore (a flag relay system) and the heliograph (optical telegraphy using mirror-directed sunlight reflections).
               *     হাওড়ার আন্দুল বাসস্ট্যান্ড থেকে মিনিট পনেরো হাঁটাপথে খটির বাজার। পাশে বয়ে যাওয়া খরস্রোতা সরস্বতী নদী । দক্ষিণ তীরে জীর্ণ এক ইটের গম্বুজ— স্থানীয় মানুষের কাছে সিমাফোম টাওয়ার।হাওড়ার ডোমজুড়ের মহিয়াড়ি গ্রাম। বর্ধিষ্ণু এই গ্রামের ইতিউতি এখন আধুনিক জীবনের ছোঁয়া। আবাসন থেকে শপিং মল সবই রয়েছে এখানে। কিন্তু গ্রামেরই খটিরবাজার এলাকায় এলে চোখ আটকাবে একটি লম্বা মিনারে। যার শরীরের ইটের পাঁজর সবুজ হয়ে গিয়েছে শ্যাওলা ও আগাছাতে। এলাকায় মানুষের কাছে মিনারটি পরিচিত ‘গির্জা’ বলে।
বর্তমানে মিনারটির উচ্চতা প্রায় আড়াইতলা বাড়ির সমান। প্রবেশপথ ভর্তি ঘন জঙ্গলে। ভেঙে গিয়েছে উপরে ওঠার সিঁড়ি। পথচারী, বাস, ট্রেকারের কনডাক্টরের কাছে এর পরিচয় শুধুই ‘গির্জাতলা’ স্টপেজ।
* Semaphore towers-APre-Telegraph communication system প্রবন্ধে Rangan Datta তার ব্লগে লিখছেন যে—
The semaphore tower at Khatirbazar,Andul is one of the easiest to spot. If you are travelling from the Second Hooghly Bridge a right turn from the Andul more (crossing) and a few minutes drive will take you to the semaphore tower located on a busy trijunction of three roads.
     Locally known as Girja, the semaphore tower is in good condition and almost intact barring a few cracks. Sadly it is heavily encroached upon and even one of the entrance to the tower have sealed off by a wall of a shop.
       The four storied tower is provided with arched entrances, windows and even circular ventilators. Each of the four tires are marked with projected rims. Portions of the top tier seem to have chipped off over time, as have the bricks from the walls.
          A look inside reveals no trace of any staircase and the wooden platform on the top has long collapsed.
             Every day thousand of locals pass by this historic structure with out knowning about its significance. But there are exceptions too a nearby shopkeeper provided us with the details of the towers history, which also included a brief on the semaphore system.
      * তারাপদ সাঁতারার " হাওড়া জেলার পুরাকীর্তি’র (১৯৭৬ সালের সংস্করণ) ১১৬ পাতায় বলা হয়েছে, “১৯০৯ খ্রীষ্টাব্দে প্রকাশিত হাওড়া জেলা গেজেটিয়ারে মাহিয়াড়ির এ স্তম্ভটির বর্ণনায় বলা হয়েছে ১৬৫’ (৫০.৩ মি.) উচ্চতার এই মিনারের চূড়ায় যেতে হলে কতকগুলি দীর্ঘ সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয়।” এই বইয়ের তথ্য অনুযায়ী, কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ থেকে শুরু করে, হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া ও বিহারের কিছু জায়গায় এই ধরনের মিনার তৈরি হয়েছিল। কিন্তু কিছু দিন পরেই ‘ইলেকট্রিক টেলিগ্রাফ’ পদ্ধতি আবিষ্কার হওয়ায় এই মিনারগুলি বাতিল হয়ে যায়। হাওড়ার বড়গাছিয়াতেও এই ধরনের একটি মিনারের কথা এই বইটিতে থাকলেও বর্তমানে তার অস্তিত্ব নেই। এলাকায় দুই শতকের প্রাচীন কীর্তি রয়েছে অথচ নেই সংরক্ষণের উদ্যোগ।

         *    অষ্টাদশ শতাব্দীতে বাংলার নবাব আলীবর্দী খাঁর শাসনকাল থেকেই প্রায়ই হত বর্গী ( মারাঠা দস্যু) হানা। প্রজাদের সতর্ক করতে নবাব আট মাইল অন্তর একশো ফুট উঁচু ইটের গম্বুজ তৈরি করান।এখান থেকেই বর্গী আক্রমণের সংকেত যেত প্রজাদের কাছে।তারই নিদর্শন খটির বাজারের এই টাওয়ার।
              *  যদিও কলকাতা গেজেটে (৪ ফেব্রুয়ারি ১৮২৪) ব্যাখ্যা।লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক- এর সময়ে দ্রুত বার্তা পাঠানোর জন্য সিমোস্ফোনিং সিগন্যালের ব্যবহার হয়। চারটি পতাকার মাধ্যমে রিলে পদ্ধতিতে খবর দেওয়া হত। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে পরীক্ষামূলক ভাবে সিমোস্ফিয়ার টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা চালু হয়।১৮৫২ সালে বৈদ্যুতিন টেলিগ্রাফ চালু হলে খটির বাজারের এই সিমোস্ফিয়ার টাওয়ার অচল হয়ে যায়।বর্তমানে এই টাওয়ার এতটাই জীর্ণ যে প্রশাসনিক উদাসীনতায় যে কোনো মুহূর্তে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
      *  বড়গাছিয়ার সিমাফোর টাওয়ারঃ—
শিক্ষক মাননীয় হারাধন মান্না এই বিষয়ে তার একটি প্রবন্ধে উল্লেখ করেন যে—"টেলিগ্রাফ যোগাযোগ ব্যবস্থার ( ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে আধুনিক টেলিগ্রাফ যোগাযোগের ব্যবস্থা হয়)আদি পূর্বে বড়গাছিয়া (১৮২১-৩০খ্রিঃ) একটি একশত ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট সিমাফোর সিগন্যাল টাওয়ার নির্মিত হয়।সিমাফোর স্তম্ভের নিচেকার ব্যাস ছিল তেইশ ফুট, দেওয়াল ছিল সাত ফুট চওড়া। স্তম্ভের মাথার দিকটা আনুপাতিক হারে সরু হত। দেখতে অনেকটা গির্জার মতো। তাই লোকমুখে এইটি গির্জা নামে পরিচিত ছিল।এর পাশে যে পুকুর কাটা হয় তা গির্জা পুকুর নামে পরিচিত।ধর্মতলার কাছে ছিল, এই স্তম্ভটি নষ্ট হয়ে গেছে।"
Picture Supratik Maitra.
ঋণঃ—
উইকিপিডিয়া, গুগল, হাওড়া জেলার কথা, ডঃ সুধীর কুমার মিত্র, আভাসচন্দ্র মজুমদার, তারাপদ সাঁতরা, আনন্দবাজার পত্রিকা, গ্রাম বাংলার ইতিহাস।