রণতোষ মুখোপাধ্যায়:- চৈত্রের সঙ এখন শহর- শহরতলি থেকে উধাও। এমনকি বউবাজারের অমন জমকালো জেলেপাড়ার সঙ্গে সেও আজ মৃতপ্রায়।
হাওড়া জেলার কাসুন্দিয়া থেকে উনিশ শতকে যে সঙ বের হত তারা ছড়া কাটত এই বলে —
সংসারেতে সাজার ওপর সাজেন যিনি যেথা,
তারি ছবি দেখাই সবে সহজ ভাষায় সোজা।
সমাজনীতি, ধর্মনীতি, শিক্ষানীতি আদি,
বলতে গিয়ে কারো প্রাণে ব্যথা দিই যদি।
ক্ষমা করবেন, সবার কাছে এই মোদের মিনতি
সত্যের ভাষণ, সত্যের গানই মোদের সঙ-এর নীতি।
হাওড়ার শিবপুর, খুরুট, রাধাপুর, এসব নানা জায়গা থেকে সঙ বের হত সেকালে।সঙের মিছিল বার করত জেলে, কাঁসারী, মুচি, শ্রমজীবী মানুষের দল। ভোরবেলা শুরু হয়ে সায়াহ্নে শেষ হত শোভাযাত্রা।
এক সময়ে হাওড়া জেলায় এবং কলকাতার জনপ্রিয় মনোরঞ্জনের উপাদান হিসেবে প্রচলিত ছিল এই সঙ যা 'জেলেপাড়ার সঙ' নামে প্রসিদ্ধ ছিল। হাওড়ার অনেক গ্রামেই সং পালা বা সং যাত্রার দল থাকত৷ আগে সঙের পালায় লিখিত পাণ্ডুলিপি থাকত না৷ দলের ম্যানেজার থেকে আরম্ভ করে শিল্পী, কলা-কুশলীরা সবাই এক সঙ্গে মিলেমিশে মুখে মুখে সঙের কাহিনি, গান তৈরি করতেন৷ অভিনেতারাও নিজেদের ইচ্ছেমতো সাজসজ্জা করে, পোশাক-আশাক পরে আসরে বা শোভাযাত্রায় যোগ দিতেন৷ হাওড়ার বিভিন্ন গ্ৰামে মূলত শিব পার্বতী হিরণ্যকশিপু, গৌর-নিতাই সেজে, কিংবা নরসিংহের রূপ এই ধরনের পৌরাণিক বিষয়ে সঙ সেজে অভিনয় করতেন মানুষজন। কিন্তু শহর কলকাতার সঙের ঝোঁক ছিল সমাজের অনাচার আর দুর্নীতির ওপর কষাঘাতের দিকে। সে শোভাযাত্রায় থাকত মিলিটারি ব্যাণ্ডের নকল, দ্রাবিড় ব্রাহ্মণের দল, ধোবার কাপড় কাচা, ঘানিতে সর্ষের ঘুরপাক, মোসাহেব সর্বস্ব বাবুদের নানা ভড়ং, কৃষ্ণ আর গোয়ালিনীদের প্রেম। সামাজিক প্রথা রীতিনীতি এসব নিয়ে ব্যঙ্গ হত সঙের গানে।
কলকাতার বিভিন্ন অংশে একদা অনেক সঙ বেরোত৷ কাঁসারিপাড়া, বেনেপুকুর, খিদিরপুর, জেলেপাড়া প্রভৃতি অঞ্চলের সং ছিল এক কালে খুবই বিখ্যাত৷ বিশেষ করে জেলেপাড়ার সঙের খ্যাতি ছিল সারা বাংলাজুড়ে৷ প্রধানত উচ্চবর্ণের শোষণ, ধর্মীয় গোঁড়ামি, প্রশাসনিক অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কারণেই জেলেপাড়ার সঙ কে বার বার নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে হয়েছে৷ আবার সমসাময়িক কোনও বিশেষ ঘটনা ও উঠে আসত সঙের গানে যেমন ১৯১৭ খ্রীঃ চৈত্র সংক্রান্তির দিন জেলে পাড়ার সঙের দল গেয়েছিল একটি বিশেষ গান — 'বিদ্যার মন্দিরে সিঁদ' — কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশ্ন চুরির ঘটনা নিয়ে লেখা হয়েছিল সেই গান।এদেশে সঙের দল বিভিন্ন জেলেপড়ার সঙের অনেক গান লিখেছেন রূপচাঁদ পক্ষী, অমৃতলাল বসু, নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী প্রমুখ।
কলকাতায় এক বিশেষ ধরনের ঠেলাগাড়ি তৈরি করা হতো সঙ বের করার জন্য।এগুলিকে বলা হতো কাটরা গাড়ি।সেই গাড়ির সাথে জুড়ে দেওয়া হতো ঘোড়া বা মোষ।বিভিন্ন মানুষ বিচিত্র সব পোশাক পরে মুখে নানা রঙ মেখে নানারকম অঙ্গভঙ্গি করে ছড়া কাটতেন।আসলে এরা পেশায় ছিলেন মৎস্যজীবী। কিন্তু এই বিচিত্র পোশাক আর রঙের আড়ালেই দেশের মানুষকে সামাজিক ভাবে সচেতন করার এক অন্যরকম প্রচেষ্টার মাধ্যম ছিল এই চৈত্র সঙ বা জেলেপাড়ার সঙ।
হাওড়া জেলার কাসুন্দিয়া থেকে উনিশ শতকে যে সঙ বের হত তারা ছড়া কাটত এই বলে —
সংসারেতে সাজার ওপর সাজেন যিনি যেথা,
তারি ছবি দেখাই সবে সহজ ভাষায় সোজা।
সমাজনীতি, ধর্মনীতি, শিক্ষানীতি আদি,
বলতে গিয়ে কারো প্রাণে ব্যথা দিই যদি।
ক্ষমা করবেন, সবার কাছে এই মোদের মিনতি
সত্যের ভাষণ, সত্যের গানই মোদের সঙ-এর নীতি।
হাওড়ার শিবপুর, খুরুট, রাধাপুর, এসব নানা জায়গা থেকে সঙ বের হত সেকালে।সঙের মিছিল বার করত জেলে, কাঁসারী, মুচি, শ্রমজীবী মানুষের দল। ভোরবেলা শুরু হয়ে সায়াহ্নে শেষ হত শোভাযাত্রা।
এক সময়ে হাওড়া জেলায় এবং কলকাতার জনপ্রিয় মনোরঞ্জনের উপাদান হিসেবে প্রচলিত ছিল এই সঙ যা 'জেলেপাড়ার সঙ' নামে প্রসিদ্ধ ছিল। হাওড়ার অনেক গ্রামেই সং পালা বা সং যাত্রার দল থাকত৷ আগে সঙের পালায় লিখিত পাণ্ডুলিপি থাকত না৷ দলের ম্যানেজার থেকে আরম্ভ করে শিল্পী, কলা-কুশলীরা সবাই এক সঙ্গে মিলেমিশে মুখে মুখে সঙের কাহিনি, গান তৈরি করতেন৷ অভিনেতারাও নিজেদের ইচ্ছেমতো সাজসজ্জা করে, পোশাক-আশাক পরে আসরে বা শোভাযাত্রায় যোগ দিতেন৷ হাওড়ার বিভিন্ন গ্ৰামে মূলত শিব পার্বতী হিরণ্যকশিপু, গৌর-নিতাই সেজে, কিংবা নরসিংহের রূপ এই ধরনের পৌরাণিক বিষয়ে সঙ সেজে অভিনয় করতেন মানুষজন। কিন্তু শহর কলকাতার সঙের ঝোঁক ছিল সমাজের অনাচার আর দুর্নীতির ওপর কষাঘাতের দিকে। সে শোভাযাত্রায় থাকত মিলিটারি ব্যাণ্ডের নকল, দ্রাবিড় ব্রাহ্মণের দল, ধোবার কাপড় কাচা, ঘানিতে সর্ষের ঘুরপাক, মোসাহেব সর্বস্ব বাবুদের নানা ভড়ং, কৃষ্ণ আর গোয়ালিনীদের প্রেম। সামাজিক প্রথা রীতিনীতি এসব নিয়ে ব্যঙ্গ হত সঙের গানে।
কলকাতার বিভিন্ন অংশে একদা অনেক সঙ বেরোত৷ কাঁসারিপাড়া, বেনেপুকুর, খিদিরপুর, জেলেপাড়া প্রভৃতি অঞ্চলের সং ছিল এক কালে খুবই বিখ্যাত৷ বিশেষ করে জেলেপাড়ার সঙের খ্যাতি ছিল সারা বাংলাজুড়ে৷ প্রধানত উচ্চবর্ণের শোষণ, ধর্মীয় গোঁড়ামি, প্রশাসনিক অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কারণেই জেলেপাড়ার সঙ কে বার বার নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে হয়েছে৷ আবার সমসাময়িক কোনও বিশেষ ঘটনা ও উঠে আসত সঙের গানে যেমন ১৯১৭ খ্রীঃ চৈত্র সংক্রান্তির দিন জেলে পাড়ার সঙের দল গেয়েছিল একটি বিশেষ গান — 'বিদ্যার মন্দিরে সিঁদ' — কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশ্ন চুরির ঘটনা নিয়ে লেখা হয়েছিল সেই গান।এদেশে সঙের দল বিভিন্ন জেলেপড়ার সঙের অনেক গান লিখেছেন রূপচাঁদ পক্ষী, অমৃতলাল বসু, নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী প্রমুখ।
কলকাতায় এক বিশেষ ধরনের ঠেলাগাড়ি তৈরি করা হতো সঙ বের করার জন্য।এগুলিকে বলা হতো কাটরা গাড়ি।সেই গাড়ির সাথে জুড়ে দেওয়া হতো ঘোড়া বা মোষ।বিভিন্ন মানুষ বিচিত্র সব পোশাক পরে মুখে নানা রঙ মেখে নানারকম অঙ্গভঙ্গি করে ছড়া কাটতেন।আসলে এরা পেশায় ছিলেন মৎস্যজীবী। কিন্তু এই বিচিত্র পোশাক আর রঙের আড়ালেই দেশের মানুষকে সামাজিক ভাবে সচেতন করার এক অন্যরকম প্রচেষ্টার মাধ্যম ছিল এই চৈত্র সঙ বা জেলেপাড়ার সঙ।


No comments:
Post a Comment