Tuesday, July 30, 2019

জন্ম শতবর্ষেও উপেক্ষিত অজিত কুমার বন্দোপাধ্যায়


সন্দীপ বাগ:- বনেদিয়ানা আর আভিজাত্যের মোড়কে ঘরোয়া আলোচনা আর সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালিত হল অজিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম শতবর্ষের অনুষ্ঠান। মূলত পারিবারিক অনুষ্ঠান হলেও আগ্রহী সুধীজনের প্রবেশাধিকার ছিল। এই পরিবারের কেউই আর হাওড়ার বাসিন্দা নন। এই উপলক্ষ্যে এই দিন সন্ধ্যায় ওনারা হাওড়ায় পরস্পরের সঙ্গে পুর্নমিলিত হলেন।
অজিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের বহুমুখী প্রতিভা ও সামাজিক অবদান মনে রাখার মতো। পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। পাশাপাশি ফুটবল খেলায়। ধানবাদ একাদশের রাইট উইঙ্গার ছিলেন। ওনার বড় দাদা ছিলেন একই দলের গোলকিপার। পরে ১৯৪০ সালে শীল্ড ফাইনালে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে এরিয়ানের হয়ে হ্যাট্রিক করে ৪-২ ব্যবধানে হারিয়ে শীল্ড জয়ী হন। সেদিন রাতে ওনার মা রাতের খাবার দেবার সময় মোহনবাগানকে এভাবে হারাবার জন্য ছেলের কাছে নিজের অত্যন্ত খারাপ লাগার কথা বলেছিলেন।
ব্রিটিশদের সঙ্গে লড়াই করে হাইকোর্ট পাড়ায় ১০নং ওল্ড কোর্ট হাউস স্ট্রীটে নিজের চার্টার্ড ফার্ম গড়ে তোলেন। বর্ণবিদ্বেষী ব্রিটিশদের শায়েস্তা করেছেন সুযোগ পেলেই।
সুপুরুষ চেহারা, পোষাক ও রুচিতে খাঁটি বাঙালী ছিলেন। খাদ্য রসিক ছিলেন। সামাজিক মান মর্যাদা বাড়ানোর জন্য গড়ে তোলেন হাওড়া রোটারী ক্লাব।

এই সময় হাওড়ার একমাত্র কলেজ ছিল নরসিংহ দত্ত কলেজ। এখানে বাণিজ্য শাখা ছিল না। উনি কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ জ্ঞান সেন মহাশয়কে বাণিজ্য শাখা চালু করার জন্য বিশেষ ভাবে অনুরোধ করেন।
জ্ঞান বাবু বলেন বিশ্বযুদ্ধ চলছে বলে বাণিজ্য শাখার সামান্য প্রয়োজন আছে। যুদ্ধ শেষে পঠনপাঠন হিসেবে এর আর কোনও গুরুত্ব থাকবে না। তখন উনি বিজয়কৃষ্ণ ভট্টাচার্য মহাশয়ের দ্বারস্থ হন। বিজয়বাবু ওনাকে ডাক্তার দীনবন্ধু মুখোপাধ্যায়ের কাছে নিয়ে যান। দীনবন্ধু বাবু বলেন অজিত বাবু দায়িত্ব নিলে তিনি জমি দিতে রাজী আছেন। এই ভাবে ১৯৪৮ সালে তৈরী হল হাওড়ার প্রথম কমার্স কলেজ শিবপুর দীনবন্ধু ইন্সটিটিউশন। অজিতবাবু কলকাতায় নিজের চার্টার্ড ফার্ম ছেড়ে দিনের বেলা আসতে পারবেন না। তাই নতুন ভাবে  তৈরী কলেজের কমার্স বিভাগের পঠনপাঠন শুরু হল সান্ধ্যকালীন সময়ে। নিজের পুত্রদের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হবার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও হাওড়ার দীনবন্ধু কলেজে পড়িয়েছেন। আজকের দিনে যা চিন্তার অতীত। ভালো গান করতে পারতেন। রোটারী ক্লাবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নিয়মিত অভিনয় করতেন।
এদিনের অনুষ্ঠানের প্রত্যেড়ক বক্তার থেকেই বনেদিয়ানায় ঋদ্ধ হাওড়ার সেই সময়টাকে পাওয়া গেল। হাওড়াকে আধুনিক ভাবে গড়তে তাঁদের অবদানসমূহকে ছোঁয়ার চেষ্টা ছিল এদিনের অনুষ্ঠানের মূল ভাবনা।
মনোজ মিত্রের নাটক শোনা ছিল উপস্থিত দর্শক- শ্রোতাদের কাছে একটি দুর্লভ অভিজ্ঞতা। এদিন তিনি একটি পুরো নাটক পড়ে শোনান। নাটকের নাম - কাক চরিত্র।


সঙ্গীত পরিবেশনে ঋদ্ধি মিউজিক একাডেমী এবং কাব্যপাঠে সুবীর মিত্রের পরিবেশনা ছিল অসামান্য।
স্মৃতিকথনে ছিলেন সুমন চৌধুরী ও নীলাঞ্জনা রায়।

No comments:

Post a Comment

হাওড়া শ্যামপুরে বাছরী যুব সংঘে মা সাজবেন রেশমী সুতোর সাজে

অর্পণ দাস:  হাওড়া গ্রামীণ অঞ্চলের শ্যামপুর থানার বাছরী গ্রামের "বাছরী যুব সংঘের" সার্বজনীন দুর্গোৎসবের এবছর ৫৩ তম বর্ষ । বিগত...