Wednesday, July 24, 2019

দূর্ঘটনা সামলে কেমন আছে সাঁতরাগাছি ফুট ওভারব্রিজ ! ন'মাস পরেও ছবিটা কি বদলেছে?


রণতোষ মুখোপাধ্যায়:-  সকাল ৯টা বেজে ৫ মিনিট, সাঁতরাগাছি স্টেশনের ৪এবং ৫ নং প্ল্যাটফর্মে প্রায় একই সময়ে‌ ডাউন পাঁশকুড়া-সাঁতরাগাছি ও হলদিয়া-হাওড়া লোকাল ঢুকেছে। শালিমারগামী কোনও এক্সপ্রেস ‌‌‌‌‌‌ট্রেনের যাত্রী যাঁরা সাঁতরাগাছি থেকে বাস বা ট্যাক্সি ধরবেন তারা আসছেন ফুট ওভারব্রিজ ধরে ১ নং প্ল্যাটফর্মের দিকে।যাঁরা ট্রেন ধরবেন হাওড়ার দিকের তারা নামার চেষ্টা করছেন ৫বা ৬ নং প্ল্যাটফর্মে নামার সিঁড়ি দিয়ে। আর ডাউন হলদিয়া ও পাঁশকুড়া  এই দুই লোকালের বিপুল পরিমাণ যাত্রী ঐ একই সিঁড়ি দিয়ে ওভারব্রিজের উপরে ওঠার চেষ্টা করছেন। তারাও কলকাতা গামী বাস ধরবেন।ঐ ভিড়ে আবার মিশে‌ আছেন‌ স্টেশনের ১ নং প্ল্যাটফর্মের দিক থেকে আসা ডাউন‌ ট্রেন‌ ধরার নিত্যযাত্রীরাও। সব মিলিয়ে সাঁতরাগাছির ৫০ বছরের পুরানো এবং সঙ্কীর্ণ ওভারব্রিজে এটাই প্রতিদিনের চিত্র।

২০১৮, ২৩ অক্টোবরের অভিশপ্ত রাতের পরেও চিত্রটা খুব একটা বদলায়নি।গত ২৩ অক্টোবর'১৮ সন্ধ্যে ছ'টা নাগাদ ২টি দুরপাল্লার ট্রেন একসঙ্গে ঢুকে পড়ে সাঁতরাগাছি স্টেশনে। এরপরই ঘটে সেই ভঙ্ককর ঘটনা ৷ হুড়োহুড়িতে ওভারব্রিজে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় ২ জনের ৷ আহতে হয়েছিলেন দুই  শিশু-সহ প্রায় ১৪ জন ৷ ৯ মাস আগের ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল যে রেলের নিরাপত্তায় বিস্তর ফাঁক রয়েছে , প্রয়োজনীয়তা রয়েছে আরও সজাগ হওয়ার ৷


 সাঁতরাগাছি ওভারব্রিজে পদপিষ্টের ঘটনার পর তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়ে। ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি প্রায় ৩০ পাতার  রিপোর্ট দাখিল করেছিল। রিপোর্টে কর্তব্যরত আরপিএফ কর্মীদের গাফিলতির পাশাপাশি  দায়ী করা হয়  ঘোষণার গাফিলতিকে। স্টেশন ম্যানেজার, কমার্শিয়াল বিভাগের টিসি, টিটিআই, সিটিআইকেও সমানভাবে দায়ী করা হয়েছিল রিপোর্টে। রেল কর্মীদের কর্তব্যের গাফিলতিতেই ঘটনাটি ঘটেছে এটা কমিটি  স্পষ্ট করেছিল ৷

সাঁতরাগাছি ফুটব্রিজ দুর্ঘটনার পর কেমন আছে সাঁতরাগাছি? কী বলছে প্রতিদিনের চিত্র?


এই স্টেশনে দূর্ঘটনার পর থেকেই ফুট ওভারব্রিজে ভিড় সামাল দিতে মোতায়েন করা হয়েছিল  আরপিএফ ও ভারত স্কাউট অ্যান্ড গাইডসের সদস্যদের। এমনকি ট্রেন ধরার জন্য কোনও যাত্রী ওভারব্রিজে দৌড়ালে তাকে‌ বিরত করতেও দেখা যেত আরপিএফের তরফে। যত দিন গড়িয়েছে  শিথিল হয়েছে পাহারা। এখন আর দেখা মেলেনা আরপিএফের। গুটিকয় ভলেন্টিয়ার যারা ফুট ওভারব্রিজের ভিড় সামলাতে দায়িত্বে ‌‌‌থাকেন তারা নিজেদের ‌‌‌ফোন সামলাতে আর খোশ গল্পে‌ মেতে‌ থাকেন বেশি।

দূর্ঘটনার পর পরই  সাঁতরাগাছি স্টেশনে  ১২ ফুট চওড়া আর একটি ফুট ওভারব্রিজ ৩ মাসের মধ্যে চালু করার নির্দেশ দিয়়েছিলেন রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান। সেখানে এসক্যালেটরের ব্যবস্থা থাকাার কথা বলা হয়েছিল। 
সাঁতরাগাছি স্টেশনের ফুট ওভারব্রিজে পদপিষ্ট হয়ে দু'জনের মৃত্যুতেও রেলের যে টনক নড়েনি, তার প্রমাণ আবারও সেই   কর্তব্যে গাফিলতির প্রতিদিনের  চিত্রটা।

বর্তমানে সাঁতরাগাছিতে ৬টি প্ল্যাটফর্ম আছে। দৈনিক এই স্টেশন থেকে ছাড়ছে ও ফিরছে ১১ জোড়া দূরপাল্লার ট্রেন। প্রতিদিন প্রায় ২০০টি লোকাল এই স্টেশনের ওপর দিয়ে চলাচল করা ছাড়াও সপ্তাহে ৭৭টি দূরপাল্লার ট্রেন এই স্টেশনে থামে। ফলে সেখানে যাত্রী–‌চাপও অনেক বেশি। কিন্তু ১ নং  প্ল্যাটফর্ম থেকে অন্য প্ল্যাটফর্মে যেতে ভরসা এখনও সেই  প্রায় ৫০ বছরের পুরনো ৯ ফুট চওড়া ও ১৩০ ফুট লম্বা একটিমাত্র ফুট ওভারব্রিজ।


প্রতিদিন এই সঙ্কীর্ণ পথেই যাতায়াত ‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌করেন হাজার হাজার মানুষ। রেল প্রশাসনের উদাসীনতায় আবারও ‌‌‌‌যে কোনও দিন ফিরতে পারে‌ ২৩ অক্টোবর'১৮ 'র‌ স্মৃতি। আবারও তদন্ত, আবারও তদন্ত রিপোর্ট আবারও যে‌ কে সেই।


No comments:

Post a Comment

হাওড়া শ্যামপুরে বাছরী যুব সংঘে মা সাজবেন রেশমী সুতোর সাজে

অর্পণ দাস:  হাওড়া গ্রামীণ অঞ্চলের শ্যামপুর থানার বাছরী গ্রামের "বাছরী যুব সংঘের" সার্বজনীন দুর্গোৎসবের এবছর ৫৩ তম বর্ষ । বিগত...