Thursday, July 18, 2019

ন্যায্য বেতন কাঠামো নিয়ে অনড় প্রাথমিক শিক্ষকদের আমরণ অনশন ষষ্ঠ দিনে পড়লো


রণতোষ মুখোপাধ্যায়:- কথায় বলে, বাড়ির  মজবুতি তার ভিতে আর শিক্ষার্থীর ভিত  প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। অথচ সরকারি শিক্ষাব্যবস্থায় সবচাইতে অবহেলিত বোধহয়   এই প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিই। অধিকাংশ স্কুলগুলিতেই এখন একজন বা দুজন শিক্ষক-- তা দিয়েই চলছে কোনও রকমে জোড়াতালি পঠন-পাঠন । প্রাথমিক স্কুলে সেই গায়ে হাওয়া লাগানোর দিন আর নেই। শিক্ষকদের পড়ানো ছাড়াও করতে হয় আরো নানান ধরনের কাজ। অথচ বেতন একজন গ্রুপ ডি  কর্মচারীর তুলনাতেও কম।       প্রতিবাদের পথে হেঁটে  প্রতিকার চাইতে গেলেই শিক্ষক-   শিক্ষিকাদের উপর নেমে এসেছে পুলিশের লাঠিচার্জ, জলকামান।
টানা পাঁচ দিন পার হয়ে ছ’দিনে পড়ল সল্টলেকের উন্নয়ন ভবনের সামনে প্রাথমিক শিক্ষকদের অনশন। পিআরটি স্কেল অনুয়ায়ী বেতন কাঠামো চালু, অনৈতিক ভাবে বদলি করা শিক্ষকদরে পুরনো স্কুলে ফিরিয়ে নিয়ে আসা-সহ একাধিক দাবিতে টানা পাঁচ দিন পার হয়ে ছ’দিনে পড়ল সল্টলেকের উন্নয়ন ভবনের সামনে প্রাথমিক শিক্ষকদের অনশন।
পিআরটি স্কেল আদায়ের দাবি এবং ১৪ জন প্রাথমিক শিক্ষককে বদলির প্রতিবাদে গত শনিবার থেকে আমরণ অনশনে বসেছেন উস্তি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। অনশন ছ' দিনে পড়লেও সরকারি ভাবে কোনও  আশ্বাস তো মেলেইনি  উল্টে   শিক্ষামন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, স্কুলে উপস্থিত না-হয়ে যাঁরা অনশনে অংশ নিয়েছেন, নির্ধারিত ছু‌টির দিন থেকেই তা বাদ দেওয়া হবে। আর এতেই   অনশনকারীদের আন্দোলন আরও অনমনীয় হয়েছে।


ধরনা এবং অনশন মঞ্চ থেকে আন্দোলনরত শিক্ষকেরা দাবি করেছেন, “পিআর‌টি স্কেল আমাদের দাবি নয়, আমাদের অধিকার। ১৮ জন প্রাথমিক শিক্ষকের ওই আমরণ অনশন যে দাবি না পূরণ হওয়া পর্যন্ত জারি থাকবে, সেটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের যুক্তি, ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যের তুলনায় এ রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন প্রায় অর্ধেক। এই বৈষম্য ঘোটাতেই তাঁরা আন্দোলন জারি রাখবেন”।

আন্দোলনকারীদের এও অভিযোগ তাদের ন্যায্য দাবীর বেতন কাঠামোর এই আন্দোলনে চড়ানো হচ্ছে বেতন বৃদ্ধির আন্দোলনের রঙ। তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, কবি মন্দাক্রান্তা সেন থেকে শুরু করে শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার।

পাশে‌ দাঁড়িয়েছেন ‌‌‌‌কবি শঙ্খ ঘোষও। তিনি তাঁর বিবৃতিতে  জানিয়েছেন -

"আবারও কিছু ন্যায্য দাবি নিয়ে এ রাজ্যের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকশিক্ষিকারা সরকারের কাছে কিছু আবেদন জানিয়েছিলেন। কোনও কোনও প্রসঙ্গে মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা রক্ষা করতে চাননি বা পারেননি সরকারপক্ষ। এটা প্রায় অবিশ্বাস্য ব্যাপার যে, অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় এ রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকরা প্রায় অর্ধেক বেতন পান। শিক্ষার বা প্রাথমিক শিক্ষার বিষয়ে যে বিন্দুমাত্র সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে — মনে হয় সে-বিষয়ে সরকার সম্পূর্ণ উদাসীন। এর প্রতিবাদে সংগতভাবেই নিপীড়িত শিক্ষকসমাজ আজ আন্দোলন করছেন। কোনওরকম সদর্থক প্রতিক্রিয়া না মেলায় শেষপর্যন্ত আঠারোজন ইতিমধ্যেই আমরণ অনশনের সিদ্ধান্তও নিয়েছেন আজ পাঁচদিন হল। সমস্ত নাগরিক সমাজের চোখের সামনে এটা যে ঘটতে পারছে এর চেয়ে লজ্জার আর কিছু নেই। মাঝে মাঝে আমাদের নিজেদের নিতান্ত অসহায় বলে মনে হয়। তবুও আমরা শুধু এইটুকু আশা করে থাকতে চাই যে, অবস্থাবিবেচনায় সরকারের কোনও সুচেতনা হবে, এবং এই অবর্ণনীয় দুর্দশা থেকে প্রাথমিক শিক্ষকসমাজের মুক্তির একটা ব্যবস্থা তাঁরা করবেন।" --  শঙ্খ ঘোষ


 সরকারের সুচেতনা হবে কবে তা জানেন না আন্দোলনকারীদের কেউই। বিগত দিনের ইতিহাস ঘেঁটে দেখা গেছে সুচেতনা জাগ্ৰত হতে‌ লেগে গেছে ২৭-২৮ দিন।ততদিনে অনশনরত বেশ কিছু শিক্ষক হয়ত অসুস্থ হয়ে  ভর্তি হবেন হাসপাতালে, কোনও ‌‌‌‌‌‌মহিলা শিক্ষকের‌ গর্ভের ভ্রুণ নষ্ট হয়ে যাবে চিরতরে । এতকিছুর বিনিময়ে হয়ত ভাঙবে‌ সরকারের ঘুম। আসলে‌ যে ঘুমিয়ে থাকে তার ঘুম ভাঙানো যায় কিন্তু যে ঘুমিয়ে থাকার অভিনয় করে তার ঘুম ভাঙানো------!

No comments:

Post a Comment

হাওড়া শ্যামপুরে বাছরী যুব সংঘে মা সাজবেন রেশমী সুতোর সাজে

অর্পণ দাস:  হাওড়া গ্রামীণ অঞ্চলের শ্যামপুর থানার বাছরী গ্রামের "বাছরী যুব সংঘের" সার্বজনীন দুর্গোৎসবের এবছর ৫৩ তম বর্ষ । বিগত...